তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাতে উৎসে কর বাড়ছে

রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে উৎসে কর গত অর্থবছরের চেয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2020, 04:29 PM
Updated : 12 June 2020, 03:45 AM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০২০–২১ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে উৎসের কর দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের পণ্য ও সেবা রপ্তানি কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই রপ্তানি খাতকে সার্বিক সহায়তা করার অংশ হিসেবে আয়কর অধ্যাদেশে উল্লেখিত উৎসে কর হার কমানোর প্রস্তাব করছি।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, আয়কর অধ্যাদেশে তৈরি পোশাকসহ সকল ধনের পণ্যের রপ্তানি মূল্যের উপর ১ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। এসআরও জারির মাধ্যমে এ হার হ্রাস করা হয়েছে, যা ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

“আমি আয়কর অধ্যাদেশে তৈরি পোশাকসহ সকল ধরনের পণ্যের রপ্তানি মূল্যের উপর উৎসে কর কর্তনের হার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।”

আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রপ্তানি খাতের উৎস কর ১ শতাংশ নির্ধারিত আছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে নানা সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে এই করহার থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের পণ্য রপ্তানির উপর উৎসে  কর ১ শতাংশ কেটে রাখার আদেশ জারি করা হয়। পরে পোশাক রপ্তানিকারকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবির মুখে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সেটা কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল এনবিআর।

তবে উৎসে করহার বাড়লেও মহামারীর এই কঠিন সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের সহায়তায় নগদ সহায়তাসহ যত সুবিধা ছিল অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, “পোশাক শিল্পের জন্য সরকার নগদ প্রণোদনাসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছর হতে পোশাক রপ্তানির সকল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। তবে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা এবং বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাজনিত কারণে ২০২০ সালে পণ্য বাণিজ্য হ্রাসের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশেও তৈরি পোশাকসহ সার্বিক রপ্তানি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

‘উন্নত বিশ্বে চাহিদা হ্রাসজনিত কারণে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ঋণাত্মক ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে’ উল্লেখ করে বাজেট বক্তৃতায় মুস্তফা কামাল বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকবেলায় সরকার প্রদত্ত আর্থিক প্রণোদনার সুবিধা নিয়ে বস্ত্র ও পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে এবং আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরতে পারবে বলে আশা করা যায়।

“বিদ্যমান অন্যান্য প্রণোদনার সাথে আমি ১ শতাংশ হারে এই অতিরিক্ত রপ্তানি প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।”

এছাড়া তৈরি পোশাক খাতের কর্পোরেট কর ছাড়ের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, “বর্তমানে গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন আছে এরূপ তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের করহার ১০ শতাংশ এবং গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন নেই এরূপ তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের করহার ১২ শতাংশ। এই করহার সংক্রান্ত আরএসওর মেয়াদ ৩০ জুন ২০২০ শেষ হবে। তা আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।”

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ৩৫ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয় ব্যুরো (ইপিবি) বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসের রপ্তানি আয়ের তত্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এই ১১ মাসে (জুলাই-মে) পণ্য রপ্তানি কমেছে ১১ শতাংশ।

আর তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৯ শতাংশ।