তবে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার এই বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ আগের চেয়ে তেমন বাড়তে দেখা যায়নি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কৃষি হচ্ছে আমাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই যেন খাদ্য সঙ্কট না হয়। সেজন্য এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখা যাবে না।”
ভবিষ্যতের সঙ্কট এড়াতে নিশ্চিতে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে ২২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন তিনি।
নতুন বাজেটে কৃষিতে সর্বমোট ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী, যা মোট প্রস্তাবিত মূল বাজেটের ৫.২৮ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ২৩ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের সংশোধিত মূল বাজেটের ৫.৩৯ শতাংশ।
সেই হিসাবে নতুন বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দের হার কমেছে।
করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকানোর লকডাউনে দেশের বড় একটি অংশ আয়হীন হয়ে পড়ে, সঙ্কটে রয়েছে চার কোটি অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকও।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “করোনা উত্তর পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষের যে পূর্বাভাস রয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিশাল জনজনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তাসহ কৃষিখাতের সাথে জড়িত কৃষক, কৃষি শ্রমিক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করাই কৃষিখাতের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।”
তাই অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসনে জোর দেওয়া এবং সারের ওপর ভর্তুকি অব্যাহত রাখার কথা বলেন তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, “আগামীতে কৃষিখামার যান্ত্রিকীকরণে তিন হাজার ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে কৃষি ভর্তৃকি ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হযেছে।
“বিগত বছরগুলোর মতো এবারও আমদানি খরচ যাই হোকনা কেন রাসায়নিক সারের বিক্রয়মূল্য অপরিবর্তিত রাখা হবে এবং কৃষি প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে।”
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা দুই কোটি ৮ লাখ ১৩৪৭৭ জন। আর খুচরা পর্যায়ে টিএসপি সার প্রতিকেজি ২২ টাকা, এমওপি প্রতিকেজি ১৫ টাকা ও ডিএপি ১৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় বিগত বছরগুলোর মতো কৃষিখাতে ভর্তুকি, সার বীজসহ অন্যান্য কৃষিউপকরণ প্রণোদনা, কৃষিপুনর্বাসন সহায়তা, স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে বিশেষ কৃষিঋণ সুবিধা এবছরও প্রয়োজনীয় মাত্রায় অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও ফসল কাটায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কৃষককে ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে।
গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের পরিকল্পনা
মাছ-মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা গেলেও এখনও গভীর সমুদ্রের মাছ নিজের ঘরে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ।
এবারের বাজেটে গভীর সমুদ্রের মাছ আহরণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আগামী অর্থবছরে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে মিঠা পানির মাছের নতুন জাত উদ্ভাবনে গবেষণা অব্যাহত রাখা এবং সামুদ্রিক মাছ আহরণের নতুন নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এ বছর মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা ছিল এক হাজার ২৮ কোটি টাকা।
মুস্তফা কামাল বলেন, “অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে মাছ আহরণ করে আসছেন। কিন্তু গভীর সমুদ্রে আমাদের মৎস্য আহরণ শুরু করা যায়নি। গভীর সমুদ্রে রয়েছে টুনা মাছসহ অন্যান্য মাছের অপার সম্ভাবনা।
“সরকার গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের উপযোগী জাহাজ সংগ্রহের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বেসরকারি খাতেও গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণের জন্য সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করবে।”