দশ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ৫৩ হাজার কোটি টাকা

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে থমকে যাওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে দশ বড় প্রকল্পের জন্য ৫২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে নতুন অর্থবছরে। 

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2020, 03:54 PM
Updated : 11 June 2020, 03:54 PM

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

গত কয়েক বছরে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে উন্নয়ন খাতকে। এর মধ্যে কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজের গতি থমকে গেছে করোনাভাইরাসের কারণে।

ফল এবারের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় খুব বেশি না বাড়িয়ে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ০৪৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ৬.২৭ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।

দশ মেগা প্রকল্পের মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য।

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পটির পরিচালক ড. শওকত আকবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের প্রায় সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও আমাদের কাজের গতি কমেনি। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সে কারণে আমি আগামী বছরের জন্য আরও বেশি অর্থ চেয়েছি।”

প্রকল্পের কাজের ২৬ শতাংশের কাছাকাছি বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে ৩০০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলে প্রকল্পের অগ্রগতি বেড়ে যাবে।”

রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুটি ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালের অক্টোবরে উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে।

মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উন্নয়ন শীর্ষক কর্মসূচির জন্য ৮ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা প্রকল্পগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছরে এ কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা।

তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’তে, আগামী অর্থবছর এ প্রকল্পে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা খরচ করা যাবে। বিদায়ী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা।

চতুর্থ সর্বোচ্চ ৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছে ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাহামারীর কারণে প্রকল্পের কাজ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্স্ত হয়েছে। তারপরও প্রকল্পটির ৮৭ দমমিক ৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা হয়ত আগামী বছর জুনের মধ্যে শেষ নাও করতে পারি। তবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।”

৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) নির্মাণ প্রকল্পে।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।

মাহারীর মধ্যে কাজের গতি নষ্ট হওয়ায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে ৪২ দশমিক ৩০ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

বরাদ্দের অংকের বিচারে ষষ্ঠ স্থানে থাকা ‘পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প’ আগামী অর্থবছরে পাচ্ছে ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।

এ প্রকল্পের কাজের ২৫ শতাংশ শেষ হওয়ার তথ্য দিয়ে প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন বলেন, “করোনাভাইরাস সঙ্কটে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ করতে পারব বলে আমরা এখনো আশাবাদী।”

সপ্তম সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জাপানের সহযোগিতায় পরিচালিত ‘মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপারি ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট’ প্রকল্পে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা।

‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে এবার বরাদ্দ থাকছে ২ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা, যা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অষ্টম সর্বোচ্চ।

এছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু’ প্রকল্পে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা এবং ‘দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্পে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের ৪০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

প্রকল্পের কক্সবাজার পর্যন্ত অংশের কাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।