তারা বলছে, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে তামাকপণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে কার্যকর কর ও মূল্য বৃদ্ধির যে প্রস্তাব তারা করেছিলেন, তা উপেক্ষা করা হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তামাকজাত বিভিন্ন পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বলেন, তামাক ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বাড়াতেই এই পদক্ষেপ।
বাজেটে আগের মতোই সিগারেটে চারটি স্তর রেখে একটি স্তর ছাড়া বাকি তিনটি স্তরে দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিড়ি, জর্দ্দা, গুলের দামও তুলনামূলক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে তামাকবিরোধীরা বলছে, তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে তামাক খাত থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় সম্ভব হত।
সিগারেটের চারটি স্তরের মধ্যে নিম্নস্তরের ১০ শলাকার দাম ৩৯ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এর আগে এই ১০ শলাকার দাম ছিল ৩৭ টাকা ছিল এবং সম্পূরক শুল্ক ছিল ৫৫ শতাংশ।
মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার দাম আগের মতোই ৬৩ টাকা থাকছে। উচ্চস্তরের ১০ শলাকার দাম ৯৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭ টাকা এবং অতি উচ্চস্তরের ১০ শলাকার দাম ১২৩ টাকা থেকে ১২৮ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই তিন স্তরে সম্পূরক শুল্কে পরিবর্তন না এনে ৬৫ শতাংশই রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
হাতে তৈরি ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার বিড়ি ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা। ১২ শলাকার বিড়ি ৬ টাকা ৭২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা এবং আট শলাকার বিড়ি ৪ টাকা ৪৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকার করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
ফিল্টারবিহীন এসব বিড়ির সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়ানো বা কমানোর কোনো প্রস্তাব বাজেট বক্তৃতায় নেই। তার মানে তা একই থাকছে।
ফিল্টারযুক্ত বিড়ি ২০ শলাকার দাম ১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯ টাকা এবং ১০ শলাকার দাম দেড় টাকা বাড়িয়ে ১০ টাকার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগের মতোই সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশই রয়েছে।
প্রতি ১০ গ্রাম জর্দ্দার দাম ৩০ টাকা থেকে ১০টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের দাম ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
জর্দ্দা ও গুলের দাম বাড়ানোয় সন্তোষ প্রকাশ করা হলেও এবং গুলের দাম স্বল্প বাড়ায় আগের মতো নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠি বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থেকেই যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা।
এক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটি বলেছে, বাজেটের আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন সিগারেটের চার স্তর থেকে দুটি স্তর, তামাকপন্যের উপর ৩ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করাসহ সুনিদিষ্ট করারোপ করার প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দিয়েছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়েছে।
তাদের প্রস্তাব মানা হলে সরকার অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারত বলে প্রজ্ঞার দাবি।
তামাক ও তামাকজাত পণ্য রপ্তানি উৎসাহিত করতে রপ্তানি শুল্ক অব্যাহতির সুযোগ প্রস্তাবিত বাজেটেও রাখার সমালোচনা করে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং খাদ্যশস্য চাষাবাদ ও পরিবেশবিরোধী পদক্ষেপ। এরফলে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাবে সেইসাথে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্যও বাধাগ্রস্ত হবে।”