করোনাভাইরাস সঙ্কট ৫১% পরিবারকে আয়হীন করেছে: জরিপ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউনের মধ্যে মানুষের আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ার তথ্য উঠে এসেছে ব্র্যাকের এক জরিপে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2020, 04:31 PM
Updated : 9 June 2020, 04:32 PM

মঙ্গলবার প্রকাশিত এ জরিপে দেখা যায়, সাধারণ ছুটির মধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষ উপার্জনের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৫১ শতাংশ গৃহে কোনো আয়ই হয়নি।

এতে দেখা যায়, আয়হীন পরিবারের সংখ্যা গ্রামের চেয়ে শহরে বেশি। আর নারীর রোজগারে চলে, এমন পরিবারে আয় কমেছে বেশি।

ভার্চুয়াল এক সম্মেলনে ৯ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ৬৪ জেলার ২ হাজার ৩১৭ জনের উপর পরিচালিত ওই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন গবেষক দলের সদস্য ইফফাত আনজুম আনিকা।

তিনি বলেন, দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল ও স্বল্প আয়ের মানুষদের ৬২ শতাংশ চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। আর্থিক কর্মকাণ্ডের দিক থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন ২৮ শতাংশ ব্যক্তি।

আয়ের পরিমাণে কমতির চিত্রও তুলে ধরে জরিপের ফলাফলে বলা হয়, সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার আগে যেখানে খানাভিত্তিক গড় মাসিক আয় ছিল ২৪ হাজার ৫৬৫ টাকা, সেখানে মে মাসে ৭৬% কমে ৭ হাজার ৯৬ টাকায় নেমে আসে।

এক্ষেত্রে শহর এলাকায় আয় কমার হার (৭৯%) পল্লী অঞ্চলের (৭৫%) তুলনায় কিছুটা বেশি বলে জানান গবেষকরা।

জরিপ অনুযায়ী পিরোজপুর (৯৬%), কক্সবাজার (৯৫%), রাঙামাটি (৯৫%), গাইবান্ধা (৯৪%) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া (৯৩%) জেলায় আয় কমেছে বেশি।

পুরুষ-প্রধান খানার চেয়ে নারী-প্রধান খানাগুলো আর্থিক দিক থেকে ’কিছুটা বেশি’ নাজুক উল্লেখ করে গবেষক ইফফাত বলেন, “নারী-প্রধান খানার আয় কমেছে ৮০%, অন্যদিকে পুরুষ-প্রধান খানার আয় কমেছে ৭৫%।

”নারী-প্রধান খানাগুলোর মধ্যে ৫৭% জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের কোনো উপার্জনই নেই। পুরুষ-প্রধান খানাগুলোর ৪৯% এ কথা জানিয়েছে।”

আর্থিক সংকটের এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন পরিকল্পনাসমূহ এবং বিবিধ প্যাকেজ ও প্রণোদনা ‘দারিদ্র্যবান্ধব দৃষ্টিকোণ’ থেকে গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে ব্র্যাক।

একইসঙ্গে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিখাত ও এনজিওগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি সহায়তা প্রয়োজন এমন পরিবারগুলোর উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার তৈরি পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি এ উন্নয়ন সংস্থা।

বেশিরভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা আগের মতো আছে। ১১% জানিয়েছেন, তারা মনে করেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে।

সংক্রমণের সময়ের মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য বৃদ্ধিকে সহিংসতা বাড়ার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন অধিকাংশ ৫৮ ভাগ উত্তরদাতা।

এদিকে, চার ভাগের তিন ভাগ উত্তরদাতা (৭৬%) জানিয়েছেন, তারা ভাইরাস সংক্রমণরোধী পদক্ষেপগুলো সবসময় মেনে চলেন। বাকিরা অনিয়মিতভাবে অনুসরণ করেন, যা আশঙ্কাজনক।

জরিপে অংশ নেওয়া ৭৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তারা করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবেন না। এ বিশ্বাস গ্রামাঞ্চলের চেয়ে (৮১%) শহরে সামান্য কম (৭১%)।

আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো বিষয়ে উত্তরদাতাদের ৩৮% মনে করেন অভাবী পরিবারগুলোর কাছে সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আরো সমন্বয় প্রয়োজন।

নগর এলাকার অধিবাসী উত্তরদাতাদের (৬২%) তুলনায় গ্রামাঞ্চলের উত্তরদাতাদের (৭২%) মধ্যে সহায়তার প্রয়োজন কিছু বেশি বলে জরিপে বেরিয়ে এসেছে।

জরিপের ফল প্রকাশের ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সাবেক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সরকার শ্রমঘন খাতকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা যায়।”

প্রবাসফেরত শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরামর্শও দেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং ব্যবসায় উদ্যোগগুলোর কাছে আর্থিক সহায়তা পৌঁছাতে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার ভূমিকা তুলে ধরে বক্তব্য দেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক শামেরান আবেদ।

তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা বেশ চ্যালেঞ্জিং, কারণ তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো নতুন ব্যবস্থার প্রসার প্রয়োজন। একবার এই ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেই মানুষ সহজেই আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে।”

বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, “কাউকে পেছনে ফেলে যাওয়ার উপায় নেই। সেবার দ্বৈততা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার চেয়ে এটাই বেশি জরুরি। বাংলাদেশের মতো কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য সার্বজনীন সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান এবং ব্র্যাকের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী আলোচনায় যোগ দেন।