পোশাক শিল্প মালিকরা কথা রাখেননি: সিপিডি

শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে পোশাক শিল্প মালিকরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি দাবি করে গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলেছে, সে কারণে সরকারের প্রণোদনার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2020, 03:36 PM
Updated : 9 June 2020, 03:36 PM

মঙ্গলবার ‘রেসপন্ডিং টু কোভিড-১৯ : অ্যা র‌্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট অব স্টিমুলাস প্যাকেজ অ্যান্ড রিলিফ ম্যাজার্স’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে একটি  জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে এই বক্তব্য দেয় সংস্থাটি।

করোনাভাইরাস মহামারীতে সঙ্কটে পড়া পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। কারখানা মালিকদের ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে এই অর্থ।

সংলাপে মুল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম নিজেদের একটি জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, “প্রায় ১৫ শতাংশ শ্রমিক তাদের এপ্রিল মাসের পূর্ণাঙ্গ বেতন পেয়েছেন, বাকিরা কেউ আংশিক পেয়েছেন এবং প্রায় ২৭ শতাংশেরও বেশি শ্রমিক অর্ধেকেরও কম বেতন পেয়েছেন কিংবা একেবারে কিছুই পাননি।”

জরিপের ফল অনুযায়ী, প্রায়৬৩ শতাংশ শ্রমিক তাদের বাসাভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি এবং জরিপে অংশ গ্রহণকারী প্রায় ৩৫ শতাংশ শ্রমিক বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন।

মোয়াজ্জেম বলেন, “উদ্যোক্তারা যে অঙ্গীকার করেছিলেন, যে তারা এপ্রিল থেকে পরবর্তী মাসগুলোতে শ্রমিকদের বেতন দেবেন, সেই অঙ্গীকার তারা রাখেননি।

“এর ফলে শ্রমিকের ন্যুনতম আয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং সরকার অর্থনীতি পূনরুজ্জীবনের জন্য যে প্রণোদনার উদ্দেশ্য তাও অর্জিত হচ্ছে না।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিকেএমইএ‘র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক শ্রমিকদের বেতন নিয়ে সিপিডির জরিপের তথ্যে দ্বিমত প্রকাশ করেন।  

মোয়াজ্জেম বলেন, ক্ষুদ্র ও বিজিএমইএর সদস্য নয় এমন কারখানা এই ঋণ পাচ্ছে না। এমনকি বায়িং হাইজ এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ঋণের প্যাকেজের সুবিধা পাচ্ছে না। এসব কারখানার শ্রমিকরাই বেতন পাচ্ছে না।

ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি।

মোয়াজ্জেম বলেন, গত ২ মে পর্যন্ত ৩৫টি ব্যাংক ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছে। ২ হাজার ১৩২টি বিজিএমইএ সদস্যভূক্ত পোশাক কারখানা সেই ঋণের জন্য আবেদন করেছেন। আর সদস্য বহির্ভূত কারখানাসহ হিসাব করলে প্রায় ৫৮ শতাংশ কারখানা সেই ঋণের জন্য আবেদন করেছে। বাকি ৪২ শতাংশ কারখানা আবেদন করেনি।

“বড় গ্রুপ অব কোম্পানিজগুলো হয়ত এই ঋণের আবেদন করেন নি। তারা হয়ত এই দুঃসময়েও কর্মীদের বেতনভাতা দেবার সক্ষমতা রাখেন। আমাদের মনে হচ্ছে, এর বাইরে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা আছেন, যারা এই ঋণের জন্য আসেননি।”

যারা ঋণ সুবিধা নিতে আসেননি সেসব কারখানার শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না বলে আশঙ্কা সিপিডির।

‘বিক্ষিপ্তভাবে’ প্রণোদনার অর্থ দেওয়ার পরিকল্পনার কারণে উদ্দেশ্যে অর্জিত হচ্ছে না বলে মত প্রকাশ করেন মোয়াজ্জেম।

অনুষ্ঠানে সঞ্চালনায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদ খাতুন বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশেই একইভাবে শ্রমিক ছাঁটাই না করে শতভাগ বেতন দেওয়ার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

“এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে এসব প্রণোদনা আমাদের হয়ত কিছু দিন ভাসমান রাখবে, কিন্তু বাঁচিয়ে তুলবে না।”

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এই প্রণোদনার প্যাকেজে ঋণ খেলাপিদের অন্তুর্ভুক্ত করার বিষয়টির সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “দুটি বিষয় আশংকার। একটি হচ্ছে- ঋণ খেলাপিদের নিয়ে সরকার সম্পূর্ণভাবে চুপ। তাদেরকে এখনো প্রণোদনা প্যাকেজের বাইরে রাখা হচ্ছে না।

“দ্বিতীয়টি হচ্ছে- বেসরকারি ব্যাংকের একজন পরিচালক আরেক পরিচালকের সম্মতি নিয়ে বড় ধরনের ঋণ অনুমোদন করাতে পারেন।”

বিকেএমইএ‘র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, “সবকিছু ঠিকঠাক হলে আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে আমরা আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারব।

“বর্তমানে সারাবিশ্বে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে চীনবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা আগের থেকেও ভালো করতে পারি। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কারখানাগুলোকে চালু রাখা। কারণ কোনও সুযোগ তৈরি হলেও বন্ধ কারখানায় কেউ অর্ডার দেবে না।”

তিনি উদ্যোক্তাদের সমস্যার দিকটি তুলে ধরে বলেন, মাঝারি পর্যায়ের একটা কারখানায়ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলসহ মাসে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা লাগে।