রাজস্ব আদায়েও ‘ভাইরাসের ক্ষত’

করোনাভাইরাস মহামারীর কবলে পড়ে গেল এপ্রিল মাসে সরকারের রাজস্ব আদায় তলানিতে ঠেকেছে, এই মাসে এনবিআরের আওতায় মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2020, 02:39 PM
Updated : 22 May 2020, 02:39 PM

চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, প্রতি মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ২৭ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা। এর আগের মাসগুলোতে মাসে গড়ে আদায় হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৩৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি।

এপ্রিল মাসের এই আদায় চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের গড় আদায়ের মাত্র ৪১ শতাংশ।

অর্থনীতিতে করোনাভাইরাস মহামারী ধাক্কার পর গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ২৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা কমিয়ে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে। সেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। সেখানে আদায় করা সম্ভব হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা।

অর্থাৎ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকেও ১০ মাসে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় পিছিয়ে আছে। দশ মাসের রাজস্ব আহরণ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৪ শতাংশের কাছাকাছি।

চলমান বাজেটে শুধু এনবিআরের মাধ্যমে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা  ধরা হয়েছিল।

রাজস্ব বোর্ডের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই মহামারীর মধ্যেও গত দশ মাসে যা আদায় হয়েছে, তা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা বা দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। বিগত পাঁচ বছরে রাজস্ব আহরণের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন করোনা মহামারীর কারণে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী করতে পারছে না, এতে সরকারের কিছুই করার নেই।”

তবে মহামারীর আগেও সরকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ বাড়াতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “সংস্কারের নামে অপসংস্কার করার কারণে রাজস্ব আহরণে এভাবে বেকায়দায় পড়ছে সরকার। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের নামে একটা হ য ব র ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”

সুষ্ঠুভাবে সংস্কার করতে পারলে অবশ্যই রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

এখন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের কাটছাট করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ রয়েছে। অর্থবছর শেষে ৬৫-৭০ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। তখন ওই অর্থ সরকার অন্য দিকে ব্যয় করতে পারবে।”

চলমান করোনাভাইরাস সংকটে প্রান্তিক মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনে সরকারি কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেন আহসান এইচ মনসুর।

“সরকারের কম গুরুত্বপূর্ণ খাতের ব্যয় কমানো উচিত। তা না করে উল্টো খরচ আরও বাড়াচ্ছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়,” বলেন তিনি।