সব মিলিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১৯ মে পর্যন্ত (২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ১৯ মে) আন্ত:ব্যাংক মুদ্রার বাজার দরে ৮২ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের কাছেই প্রায় অর্ধেক; ৩৬ কোটি ডলারের মত বিক্রি করা হয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে বিক্রি করা হয়েছিল ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক কিনেছিল অর্ধেকেরও বেশি; ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
চলতি মাসের ১৯ মে পর্যন্ত ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরও অর্ধেকের বেশি কিনেছে অগ্রণী ব্যাংক।
বুধবার আন্ত:ব্যাংক মুদ্রার বাজারে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। গত কয়েক মাস ধরে এই একই জায়গায় ‘স্থির’ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ সব তথ্য জানিয়ে বলেন, বাজারের চাহিদা মেটাতেই ডলার ছাড়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজই এটি।
“যখন বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়বে তখন কিনবে। আর যখন প্রয়োজন হবে অর্থাৎ চাহিদা বাড়বে তখন বিক্রি করবে। বাজার স্বাভাবিক বা স্থিতিশীল রাখতে বরাবরই এই কাজটি করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত জ্বালানি তেল এবং এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির এলসি খুলতেই (ঋণপত্র) এখন বেশি ডলার ব্যয় হচ্ছে। আর এর সিংহভাগই করছে অগ্রণী ব্যাংক।
জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলা এসব ব্যাংকে এলসি খুললে অগ্রণী ব্যাংকের উপর চাপ কমবে; বাংলাদেশ ব্যাংকেরও এতো বেশি ডলার বিক্রি করতে হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগ্রণী ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক যে টাকা পাচ্ছে সেই নগদ টাকাটা কিন্তু আটকে থাকছে। সেক্ষেত্রে বাজারে তারল্য সরবরাহ কমে যাচ্ছে। যেটা এই সংকটময় মুহূর্তে মোটেই ভালো নয়।
“সোনালী বা ইসলামী ব্যাংকের কাছে থাকা ডলার দিয়ে যদি জ্বালানি তেল ও এলএনজির এলসি খোলা হতো তাহলে কিন্তু এই টাকাটা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আটকে থাকতো না; বাজারে থাকতো।”
এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্টোবাংলাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা।
১৯ দিনেই ১০৯ কোটি ডলার রেমিটেন্স করোনাভাইরাস সঙ্কটে আমদানি ও রপ্তানি তলানিতে নেমে আসলেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আশার আলো জাগিয়ে যাচ্ছে।
ঈদ সামনে রেখে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
চলতি মে মাসের প্রথম ১৯ দিনে ১০৯ কোটি ১০ লাখ ডলার তারা দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত এপ্রিল মাসের পুরো সময়ের চেয়েও বেশি। এপ্রিলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
রেমিটেন্সের এই উল্লম্ফনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ফের ৩৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
করোনাভাইরাস মহামারী গোটা বিশ্বকে সঙ্কটে ফেলে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের রেমিটেন্সেও পড়েছে তার প্রভাব। আশঙ্কা করা হয়েছিল, আমাদানি ও রপ্তানি আয়ের মত অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রেমিটেন্সও তলনিতে নেমে আসবে।
কিন্তু তেমনটি হয়নি। ঈদের মাস মে’তে অতীতের যে কোনো ঈদের মাসের চেয়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামারীর কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সঙ্কট চলছে। আমরা ভেবেছিলাম রেমিটেন্সের পরিমাণ একেবারে তলানিতে নেমে আসবে।
“তবে তা হয়নি। প্রতিবারের মত এবারও ঈদে পরিবার-পরিজনের জন্য বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।”
আরও খবর-