স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2020, 12:24 PM
Updated : 19 May 2020, 12:24 PM

আগামী অর্থ বছরে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) ভার্চুয়াল সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।এই এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। তবে গত মার্চ মাসে তা সংশোধন করে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে গণভবন থেকে এই ভার্চুয়াল সভায় যোগ দেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে পাশে রেখে আগামী অর্থবছরের জন্যে এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেন তিনি।

এ সময় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) অগ্রাধিকারভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও এনইসি সদস্যবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে এই ভার্চুয়াল সভায় যোগ দেন।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তিনি বলেন, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত এডিপির অর্থ দিয়ে ১ হাজার ৫৮৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

এডিপির জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বহিঃসম্পদ থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকার যোগান দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়াও বৈঠকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৫ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৭০ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা যোগান দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর এই বরাদ্দ দিয়ে আরও ৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।

“সে হিসাবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দসহ এডিপির সর্বমোট আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা,” বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “মহামারীর এই সময়ে স্বাস্থ্য খাত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং আমরা গুরুত্বও দিয়েছি। কিন্তু সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এ খাতের সক্ষমতা কতটুকু তাও দেখতে হবে। শুধু বরাদ্দ দিলেই তো হবে না। বাস্তবায়ন করতে হবে।

“তাই সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছি। ১০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”

স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতে এই বরাদ্দ এডিপিতে মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, সপ্তম সর্বোচ্চ।

বরাদ্দের দিক দিয়ে অষ্টম অবস্থানে থাকা কৃষি খাতেও প্রায় এক হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহামারীর এই দিনে এই দুটি খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও প্রয়োজনে যে কোনও সময় এই দুই খাতের জন্য বিশেষ কোনও বরাদ্দ ও প্রকল্প অনুমোদনের প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে তা অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।”

আগামী অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত এডিপির মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। এ খাতের জন্য সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতের জন্য।এ খাতে প্রায় ২৫ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৫৭ ভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে, প্রায় ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ০৯ শতাংশ।

চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাতে, প্রায় ২৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ।

পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ, প্রায় ১৮ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে। এটি মোট বরাদ্দের প্রায় ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

ষষ্ঠ সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৫৮ ভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে।

অষ্টম সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ০৯ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কৃষি খাতে।

নবম সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৫২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বা মোট বরাদ্দের প্রায় ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রাণি সম্পদ খাতে।

এবং দশম সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসন খাতে।