প্রবাসী, বেকার ও পল্লীবাসীকে ঋণ যোগাতে চার প্রতিষ্ঠানকে ২০০০ কোটি টাকার তহবিল

করোনাভাইরাস সঙ্কটে প্রবাসী, কর্মহীন বেকার ও গ্রামের মানুষকে ঋণ সহায়তা যোগাতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি করে মোট ২০০০ কোটি টাকার তহবিল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2020, 06:26 AM
Updated : 14 May 2020, 10:01 AM

বৃহস্পতিবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এই নতুন ‘প্রণোদনা প্যাকেজের’ ঘোষণা আসে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কাউকাউস অনুষ্ঠানে জানান, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে এটি হবে সরকারের ঘোষিত ১৮তম প্রেণোদনা প্যাকেজ ।

এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৮টি প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হল, যা দেশের মোট জিডিপির ৩.৬ শতাংশ।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর যুবকদের বেকারত্ব দূর করতে কর্মসংস্থান ব্যাংক গঠনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে কোনো যুবক বা তরুণ বা তরুণী জামানত ছাড়াই এখান থেকে স্বল্প সুদে দুই লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবে। এই ঋণ নিয়ে তারা নিজেরা ব্যবসা করতে পারবে অথবা যৌথভাবে কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব মিলে তারা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে।”

কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে তাদের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর জন্যই আরো ৫০০ কোটি টাকা সেখানে বিশেষ আমানত হিসেবে দেওয়া হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।

প্রবাসীদের কল্যাণে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গঠনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারা যেন ঘরবাড়ি বিক্রি না করে ঋণ নিয়ে বাইরে যেতে পারে, বিদেশে যেতে পারে তাদের কর্মসংস্থানের জন্য, সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নামে আরেকটি বিশেষ ব্যাংক আমরা প্রতিষ্ঠা করে দিই।

“সেই ব্যাংকেও আমরা আরও টাকা দেব। সেখানেও আমরা অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা দেব। এর আগে সেখানে আমরা ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছি। আমরা আরও ৫০০ কোটি টাকা সেই ব্যাংকে জমা দিয়ে দিচ্ছি।”

কোভিড-১৯ সঙ্কটে প্রবাসে কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে আসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখানেও বহু মানুষ এখন কাজ হারাচ্ছে, অনেকে দেশে ফিরে আসছে। তারা আমার দেশের নাগরিক, তারা ওখানে গিয়ে কষ্ট করুক তা আমি চাই না। তারা ফিরে আসছে, ফিরে আসবে।

“এখানে এসে তারা যেন কিছু কাজ করে খেতে পারে, তাদের সেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি। তারা যাতে এই সুযোগটা পায়, সেজন্য ওই ব্যাংকে (কর্মসংস্থান) আরও ৫০০ কোটি টাকা আমরা দিয়ে দিচ্ছি।”

পাশাপাশি পল্লী কর্ম সংস্থান ব্যাংকেও একই পরিমাণ প্রণোদনার ঘোষণা অনুষ্ঠানে দেন সরকারপ্রধান। 

ইতোমধ্যে প্রায় ৭ হাজার কওমি মাদ্রাসায় ১০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একেবারে এতিম, যাদের কোথাও যাওয়ার নেই। তারা খুব একটা কষ্টের মধ্যে ছিল। আমরা তাদের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৮৬৫টি কওমি মাদ্রাসা, যেখানে এতিমখানা আছে, সেখানে আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। প্রায় ১০ কোটির কাছাকাছি টাকা আমরা ব্যয় করেছি।”

দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৭ হাজার কওমি মাদ্রাসাকে ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে মসজিদে আর্থিক সহয়তা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন মসজিদ, সেখানে ইমাম মুয়াজ্জিনসহ যারা থাকেন, সাধারণত এই রমজান মাসে সবাই ওখানে যায়, তারাবির নামাজ পড়ায়। সেখানে মসজিদে তাদের একটা ভালো ইনকাম হয়, অবশ্য যারা মসজিদ কমিটিতে আছে, তারা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, বিত্তশালীরা দান করে যাচ্ছে, সেটা আমি জানি, সেই খবরটা আমরা রাখি।

“তারপরও আমি মনে করি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আমি ইতোমধ্যে একটা তালিকা করতে বলে দিয়েছি- আমি সকল মসজিদে এই ঈদ উপলক্ষে বা রমজান উপলক্ষে আমি কিছু আর্থিক সহায়তা দেব, সেই তালিকাটাও আমরা করছি। সেটাও আমরা দিয়ে দেব।”

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রত্যেকটা এলাকার মানুষের কষ্ট দূর করা- এটাই আমার লক্ষ্য। আমরা সেটাই চাই। এত মানুষ… হয়ত অনেক বেশি দিতে পারব না। কিন্তু কিঞ্চিত পরিমাণ দিলেও যেন দিতে পারি, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়; এবং সবাইকে যেন কিছু সহযোগিতা করতে পারি, সেই চিন্তা করে আমরা এই পদক্ষেপগুলো নিচ্ছি।”

মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে এই অনুষ্ঠান থেকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা করে এককালীন নগদ সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

একইসঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্নাতক ও সমমানের ২০১৯ সালের শিক্ষা উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন তিনি।