মহামারীর দিনেও ঈদের আগে রেমিটেন্স বেড়েছে

করোনাভাইরাস সঙ্কটে রেমিটেন্সে বড় ধরনের ধস নামলেও ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2020, 12:01 PM
Updated : 13 May 2020, 12:01 PM

চলতি মে মাসের প্রথম ১১ দিনে ৫১ কোটি ২০ লাখ ডলার তারা দেশে পাঠিয়েছেন, যা এপ্রিল মাসের একই সময়ের দ্বিগুণ।

এপ্রিল মাসের প্রথম ১১ দিনে মাত্র ২৫ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, আর পুরো মাসে পাঠিয়েছিলেন ১০৮ কোটি ডলার।

প্রতি বছরই দুই ঈদের আগে পরিবার-পরিজানের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা।

গতবছর রোজার ঈদের আগে মে মাসে ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল; যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামারীর কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সঙ্কট চলছে।… আমরা ভেবেছিলাম রেমিটেন্সের পরিমাণ একেবারে তলানিতে নেমে আসবে। তবে তা হয়নি। ঈদে পরিবার-পরিজনের জন্য বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।”

ঈদের আগে যেহেতু এক সপ্তাহের বেশি সময় হাতে আছে, সেহেতু রেমিটেন্স আরও বাড়বে। সব মিলিয়ে এপ্রিল মাসের চেয়ে মে মাসে বেশি রেমিটেন্স দেশে আসবে বলে আশা করছেন ছাইদুর।

তাছাড়া সরকার রেমিটেন্সে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনার শর্ত শিথিল করায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এল মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার এক সার্কুলারে জানায়, এখন থেকে কোনো প্রবাসী পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা দেশে পাঠালে কোনো কাগজপত্র ছাড়াই ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন।

আর ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্স পাঠালে প্রণোদনার জন্য দুই মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের সুযোগ পাবেন, যা আগে ছিল ১৫ দিন।

রেমিটেন্সের সঙ্গে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার অর্থ পেতে তখন প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র জমা দিতে হবে। আর প্রেরক ব্যবসায়ী হলে তার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে।

এতদিন যারা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারাও এই সুবিধা প্রাপ্য হবেন। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল থাকবে।

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সূচক রেমিটেন্সে পড়তে শুরু করেছে গত মার্চ মাস থেকে। তার আগ পর্যন্ত ২০ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি ছিল।

মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম।

পরের মাস এপ্রিলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ রেমিটেন্স এসেছে। এই অংক গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে এক হাজার ৩৩০ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে এক হাজার ৪৫৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।

রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় কমার পরও বুধবার দিনের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারে ৩২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ছিল।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ ৩৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মাসের আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে আসে।