রোববার পর্যন্ত আবেদন করা কারখানাগুলোর মধ্যে ২৫ শতাংশ কারখানার মালিক তাদের শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাকিদের বেতন দিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র নেতারা জানিয়েছেন।
প্যাকেজের নীতিমালা অনুযায়ী, পোশাক কারখানাগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলো ২ শতাংশ সহজ সুদে (সার্ভিস চার্জ) এই ঋণ বিতরণ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক রোববার পর্যন্ত প্রণোদনা প্যকেজের ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ছাড় করেছে। বাকি অর্থ দ্রুত ছাড় করা হবে।
পোশাক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের এপ্রিল মাসের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি অর্থের জন্য আবেদন জমা পড়েছিল বলে জানান তিনি।
মে ও জুন মাসের বেতন-ভাতার জন্য নতুন করে আবেদন করতে হবে জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, “সেক্ষেত্রে যদি প্রণোদনা প্যাকেজের ৫ হাজার কোটি টাকায় না হয় সেটা সরকার বিবেচনা করবে।”
বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আবেদন করা কারখানাগুলোর মধ্যে ২৫ শতাংশ কারখানার মালিক তাদের শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাকিদেরও বেতন দিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
“ব্যাংকগুলো টাকা ছাড় করতে দেরি করায় শ্রমিকদের বেতন পেতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি, এই সপ্তাহেই সব শ্রমিক এপ্রিল মাসের বেতন পেয়ে যাবেন।”
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন বলে জানান রুবানা হক।
রপ্তানিমুখী পোশাক করাখানার শ্রমিকদের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার।
বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও দেখা দেওয়ার পর এর বিস্তার রোধের পদক্ষেপে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রপ্তানিমুখী শিল্প বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে ২ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করে।
নীতিমালায় বলা হয়, যেসব কারখানা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করছে, তারাই এই তহবিলের অর্থ পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে।
এই তহবিল থেকে ২ শতাংশ সুদে দুই বছরের জন্য ঋণ দেওয়া হবে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোকে।
এই ঋণের অর্থ জোগাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। সেজন্য ব্যাংকগুলোকে অর্থও জোগাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তহবিল থেকে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ঋণ নেওয়া যাবে। ব্যাংকগুলো ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক অথবা মোবাইল ব্যাংক হিসাবে সরাসরি দেবে।
বিজিএমইএ’র মোট ২ হাজার ২৭৪ সদস্যের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণের জন্য আবেদন করেছে ১ হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান। তাদের সবাইকেই ঋণ আবেদনের সনদ দিয়েছে বিজিএমইএ।
অন্যদিকে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সদস্যের মধ্যে আবেদন করেছে আটশ’র বেশি প্রতিষ্ঠান। তারাও ব্যাংকের কাছে ঋণ আবেদনের সনদ পেয়েছে।
উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান এই প্যাকেজের আওতায় ঋণ পাবে।
৪৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ পেতে কারখানা মালিকরা আবেদন করেছেন। ২ মে ছিল আবেদনের শেষ দিন।
আরও খবর