কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সঙ্কটের মধ্যেও এপ্রিল মাসে ১০৮ কোটি ১০ লাখ (১.০৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
Published : 03 May 2020, 09:00 PM
বাংলাদেশি টাকায় প্রবাসী আয়ের এই পরিমাণ ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এই অংক আগের মাসগুলোর তুলনায় বেশ কম; এক মাসের হিসাবে আড়াই বছর পর সবচেয়ে কম রেমিটেন্স এসেছে এপ্রিলে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তার পর থেকে গত আড়াই বছরে প্রতি মাসেই রেমিটেন্স এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কোনো মাসে সেটা দেড় বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়েছে।
এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০১৮ সালের মে মাসে; প্রায় ১৭৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব এখন অবরুদ্ধ। প্রায় সব দেশেই চলছে লকডাউন। কোথাও কোনো কাজ নেই।
“এর মধ্যেও প্রবাসীরা দেশে তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। আমরা ভেবেছিলাম এই সঙ্কটের সময়ে দেশে রেমিটেন্সের পরিমাণ একেবারে তলানিতে নেমে আসবে। তবে তা হয়নি।
ছাইদুর রহমানের ভাষায়, এই পরিস্থিতির মধ্যেও প্রবাসীরা যে টাকা পাঠাচ্ছেন, তাকে ‘খুব খারাপ অংক’ বলা যাবে না।
“আমরা ভেবেছিলাম এপ্রিল মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের কম, ৯৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসবে। কিন্তু মাস শেষে রেমিটেন্স ১০৮ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।”
তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছিল ৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এক দিনেই অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল ১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার এসে এপ্রিলে রেমিটেন্সের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
“এই কঠিন সময়েও রেমিটেন্স পাঠিয়ে প্রবাসী ভাইয়েরা আবার প্রমাণ করলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা কতটা অবদান রাখেন।”
তবে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সামনের দিনগুলো নিয়ে অতটা আশাবাদী হতে পারছেন না।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটা ভালো দিক যে এখনও মোটামুটি রেমিটেন্স আসছে। তবে কত দিন এটা আসবে সে বিষয়ে সংশয় আছে।
“এখন উপার্জন বা কাজের টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন না তারা। জমানো টাকা যেটা ছিল সেখান থেকেই অথবা অন্য কারো কাছ থেকে ধার করে পরিবারের-পরিজনের বিপদের দিনে কিছু পাঠাচ্ছেন। সেটা ফুরিয়ে গেলে আর পাঠাতে পারবেন না।”
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, বাংলাদেশের রেমিটেন্সের বড় অংশ আসে মধ্যপাচ্য থেকে। জ্বালানি তেলের দাম একেবারে কমে আসায় তেলনির্ভর অর্থনীতির ওই দেশগুলোতেও দেখা দিয়েছে বড় সঙ্কট।
“সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে রেমিটেন্সের জন্য খুব ভালো খবর আসবে বলে মনে হয় না।”
বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মত। দেশে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এই রেমিটেন্সই কেবল আশার আলো জাগিয়ে রেখেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে যে ১০৮ কোটি ১০ লাখ রেমিটেন্স এসেছে তা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ১৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
আগের মাস মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম।
করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়ার পর অনেকে প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফিরে আসেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩০ জন। এরপরও কয়েকটি দেশ থেকে কিছু প্রবাসী দেশে এসেছেন।
তবে মার্চ ও এপ্রিলের অধঃগতি দেখা দিলেও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) হিসাবে রেমিটেন্সে এখনও ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে এক হাজার ৩৩০ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে এক হাজার ৮৫৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছর।
অক্টোবর মাসে আসে ১৬৪ কোটি ডলার। নভেম্বরে এসেছিল ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আসে যথাক্রমে ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ ও ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।
ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।
রিজার্ভ ৩৩.১১ বিলিয়ন ডলার
রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় কমার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৩১১ কোটি (৩৩.১১ বিলিয়ন) ডলার।
মূলত আমদানি ব্যয় কমার কারণেই রিজার্ভ কমেনি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন