পণ্য রপ্তানিতেও বড় ধস

করোনাভাইরাস মহামারীর অভিঘাতে রেমিটেন্সের মতো বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও বড় ধস নেমেছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2020, 12:23 PM
Updated : 19 April 2020, 12:45 PM

সর্বশেষ মার্চ মাসে ২৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ কম।

আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি আয়ে কোভিড-১৯ এর তেমন প্রভাব পড়েনি। মার্চ থেকে পড়তে শুরু করেছে। মার্চের প্রথম দিকে কিছু রপ্তানি হলেও শেষের দিকে একেবারেই কমে এসেছে। এপ্রিলে তো বড় ধস নেমেছে।”

তিনি জানান, মার্চ মাসে ১৯৭ কোটি ২২ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের মার্চের চেয়ে ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ কম।

আর চলতি এপ্রিল মাসের ১৫ দিনে (১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল) মাত্র ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৪ শতাংশ কম।

“যত দিন যাচ্ছে, অবস্থা ততোই খারাপ হচ্ছে। কবে যে পরিস্থিতি ভালো হবে, কোথায় গিয়ে যে শেষ হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না। পোশাক রপ্তানি শূন্যের কোঠাতেও নেমে আসতে পারে।”

অর্থনীতির গবেষক ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড–১৯ গোটা বিশ্বকে তছনছ করে দিচ্ছে। মৃত্যু–ভয়–আতঙ্কে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে পৃথিবীটা। মহামারী থেকে জান বাঁচাতে বিশ্ববাসী যে অবরুদ্ধ অবস্থা তৈরি করেছে, তাতে ওষ্ঠাগত অর্থনীতির প্রাণ, যা পৃথিবীকে ঠেলে দিচ্ছে আরেকটি মহামন্দার দিকে।”

এ অবস্থায় যে রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধস আসবে, তা ‘অবধারিত ছিল’ বলেই মনে করেন আহসান মনসুর। তার ধারণা, সামনে আরও খারাপ সময় আসছে।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি আয়ে কমতির ধারা ছিল। অর্থ বছরের আট মাস শেষে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেযে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কমে যায়। করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার বাড়ায় এখন তা আরও কমছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার রপ্তানি আয়ের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ৩৮ লাখ (২৮.৯৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।

এই নয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৩৮৯ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৮৯ বিলিয়ন) ডলার। গত বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৯০ কোটি ৩০ লাখ (৩০.৯০ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে মার্চে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ৬১ শতাংশ কম আয় হয়েছে। আর জুলাই-মার্চ সময়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ কম।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। জুলাই-মার্চ পর্যন্ত সময়ে এ খাতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪১০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ কম।

এই নয় মাসে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হন গত ডিসেম্বরের শেষে। এরপর বিভিন্ন দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পরে।

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে শুরুতেই বিপাকে পড়ে চামড়া, কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানির মত খাত, যারা চীনের বাজারের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল।

জুলাই-মার্চ সময়ে চামড়া খাতে রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ, হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ৪ শতাংশ।

তবে এই সংকটের মধ্যেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই নয় মাসে এ খাতের রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

কৃষি পণ্যের মধ্যে শাক-সবজি রপ্তানি বেড়েছে ৭৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। চা রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। তামাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। তাতে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার।

অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে আশার আলো জাগিয়ে রেখেছিল যে রেমিটেন্স, করোনাভাইরাস মহামারী তাতেও ছায়া ফেলেছে।

মার্চ মাসে রেমিটেন্স কমেছে গত বছরর একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর চলতি এপ্রিল মাসের অবস্থা আরও খারাপ।

এখন পর্যন্ত এপ্রিল মাসের প্রথম আট দিনের তথ্য পাওয়া গেছে। এই আট দিনে মাত্র ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের এই আট দিনে পাঠিয়েছিলেন দ্বিগুণেরও বেশি; ৪৩ কোটি ডলার।