নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে বড় ধস নেমেছে।
Published : 10 Apr 2020, 01:15 AM
মার্চ মাসের চেয়েও খারাপ অবস্থা নিয়ে শুরু হয়েছে এপ্রিল মাস। গত বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম আট দিনে (১ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল) ৪৩ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি এপ্রিল মাসের এই আট দিনে এসেছে তার অর্ধেকেরও কম; মাত্র ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে রেমিটেন্সের প্রবাহ সত্যিই খুব খারাপ। সামনের দিনগুলোতে কি হবে তা নিয়ে দুনিশ্চায় আছি আমরা।”
রেমিটেন্সের এই পতনে বাজারে ডলার বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার এক দিনেই বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৪ কোটি (৪০ মিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৮ এপ্রিল পর্যন্ত (২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল) ৬১ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আর কেনা হয়েছে ৪০ কোটি ডলারের মত। যে ডলার কেনা হয়েছে তার পুরোটাই গত মার্চ মাসে কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডলার বিক্রি প্রসঙ্গে ছাইদুর রহমান বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেক ব্যাংকের হাতে থাকা ডলার দিয়ে এলসির দায় পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
“চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই এখন আমরা ডলার বিক্রি করছি। বিশেষ করে জ্বালানি তেল এবং অন্যান্য জরুরি পণ্য আমদানির বিল পরিশোধের জন্য ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে।”
সরকার ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বেড়েছিল। তাতে বাজারে ডলারের সরবরাহও বেড়েছিল।
এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি কমে যায়। ফলে ব্যাংকগুলোর ডলারের প্রয়োজনও কমে এসেছিল।
এ পরিস্থিতিতে বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডলার কেনা শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে প্রায় তিন বছর বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে কোনো ডলার কেনেনি।
গোটা বিশ্ব এই মহামারীর কবলে পড়ায় রেমিটেন্স অচিরে যে আবার জেগে উঠবে না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই অর্থনীতিবিদদের।
বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
গত মার্চ মাসে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে কম ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
মার্চ মাসের রেমিটেন্স গত এক বছর তিন মাসের চেয়ে সবচেয়ে কম। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।
করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়ার পর এই মার্চ মাসেই অনেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন।
এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফিরে আসেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩০ জন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অনেক দেশই ‘লকডাউনে’ রয়েছে, সব কাজ-কর্ম বন্ধ করে নাগরিকদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতির শেষ কবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আহসান মনসুর বলেন, “দিন যতো যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে কমতে ২০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আমাদের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে, সে দেশগুলোর অর্থনীতি মূলত তেলনির্ভর।
“কত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে রেমিটেন্স আরও কমবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।”
মধ্যপ্রাচ্য থকে বাংলাদেশে যারা ফিরে এসেছেন, তারা আবার ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
তবে মার্চে অধঃগতি হলেও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে রেমিটেন্সে এখনও ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছর।
প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। অগাস্টে আসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
অক্টোবর মাসে আসে ১৬৪ কোটি ডলার। নভেম্বরে এসেছিল ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আসে যথাক্রমে ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ ও ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।
ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।