করোনাভাইরাস: অর্থনীতিতে প্রভাব কতটা, ধারণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য যেসব বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তার একটি খতিয়ান প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2020, 10:04 AM
Updated : 5 April 2020, 10:04 AM

তিনি বলেছেন, ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লক-ডাউনের ফলে স্বল্পআয়ের মানুষ ঙেমন সঙ্কটে পড়েছে, তেমনি সরকারের সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও হুমকির মুখে পড়েছে।

এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে রোববার সকালে গণভবন থেকে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শিল্প-বাণিজ্য খাতের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধিসহ চার ধরনের কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা বলেছেন।

এসব কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়িত হলে দেশে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার, স্বাস্থ্য পরিসেবার ওপর সৃষ্ট বিপুল চাপ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে নজিরবিহীন লকডাউন ও যোগাযোগ স্থবিরতা বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

শিল্প উৎপাদন, রপ্তানি বাণিজ্য, সেবাখাত বিশেষতঃ পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধস নেমেছে। শুধু সরবরাহ ক্ষেত্রেই নয়, চাহিদার ক্ষেত্রেও ভোগ ও বিনিয়োগ চাহিদা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী পুঁজি বাজারে ২৮ থেকে ৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে।

আইএমএফ ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরুর আভাস দিয়েছে। আর ওইসিডি বলছে, মন্দা প্রলম্বিত হলে বিশ্বে প্রবৃদ্ধি ১.৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বব্যাপী বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মহীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব এই প্রথম এমন মহামন্দা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কী ধরনের বা কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলার সময় আসেনি।

তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাবগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

# দেশে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থবছর শেষে এই হ্রাসের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

# চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাংক সুদের হার হ্রাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

# সার্ভিস সেক্টর, বিশেষ করে হোটেল-রেস্তোরাঁ, পরিবহন এবং এভিয়েশন সেক্টরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

# বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

# বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা কমায় এর দাম ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে; যার বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রবাসী-আয়ের ওপর।

# বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।

# দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন বন্ধ এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে।

# চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে। এর ফলে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

# বিগত ৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভবে ৭ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। সামষ্টিক চলকগুলোর নেতিবাচক প্রভাবের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে পেতে পারে।