আঁধার নেমেছে রেমিটেন্সেও

দেশে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে আশার আলো জাগিয়ে রেখেছিল যে রেমিটেন্স, করোনাভাইরাস মহামারী তাতেও ছায়া ফেলেছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2020, 01:39 PM
Updated : 4 April 2020, 09:19 AM

গোটা বিশ্ব এই মহামারীর কবলে পড়ায় রেমিটেন্স অচিরে যে আবার জেগে উঠবে না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই অর্থনীতিবিদদের।

বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

সদ্য শেষ হওয়া মার্চ মাসে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে কম ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

বিদায়ী মার্চ মাসের রেমিটেন্স গত এক বছর তিন মাসে সবচেয়ে কম। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।

করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়ার পর এই মার্চ মাসেই অনেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন।

এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফিরে আসেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩০ জন।

রেমিটেন্সে অধঃগতি নিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। যারা আছেন, তারাও কাজ করতে পারছেন না। সব বন্ধ। নিজেরাই চলতে পারছেন না। দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাবেন কী করে?”

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অনেক দেশই ‘লকডাউনে’ রয়েছে, সব কাজ-কর্ম বন্ধ করে নাগরিকদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতির শেষ কবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

আহসান মনসুর বলেন, “দিন যতো যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে কমতে ২০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আমাদের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে, সে দেশগুলোর অর্থনীতি মূলত তেলনির্ভর।

“কত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে রেমিটেন্স আরও কমবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।”

মধ্যপ্রাচ্য থকে বাংলাদেশে যারা ফিরে এসেছেন, তারা আবার ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।

মার্চে অধঃগতি হলেও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে রেমিটেন্সে এখনও ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এক হাজার ১৮৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে এক হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ায় রেমিটেন্স প্রবাহে এই গতি এসেছিল।

“প্রতি মাসেই বাড়ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখন আর সেটা নেই,” বলেন তিনি।

রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে টাকা পাঠাচ্ছেন, তিনি ওই ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন।

বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছর।

প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। অগাস্টে আসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

অক্টোবর মাসে আসে ১৬৪ কোটি ডলার। নভেম্বরে এসেছিল ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আসে যথাক্রমে ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ ও ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।

ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।