করোনাভাইরাস কতটা প্রভাব ফেলছে বিশ্ব অর্থনীতিতে? বিভিন্ন খাতের তথ্য নিয়ে লেখচিত্রের মাধ্যমে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
পুঁজিবাজারে ধস
করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে দেশে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর সেই ধাক্কা পেনশনভোগীদের সঞ্চয়ী হিসাবেও লাগতে পারে।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই বড় ধরনের ধাক্কা লাগে এফটিএসই, ডাও জোন্স নিক্কেইর মত শেয়ার সূচকগুলোতে। ১৯৮৭ সালের পর এতটা খারাপ দশায় ডাও জোন্স আর এফটিএসই কখনও পড়েনি।
বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা, করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধসিয়ে দেবে এবং বিভিন্ন দেশের সরকার যেসব পদক্ষেপ নিতে পারবে, তা এই ধস ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে।
বিপর্যস্ত পর্যটন খাত
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সার্ভিস ফ্লাইট রেডার টোয়েন্টিফোরের এর তথ্য বলছে, বিশ্বজুড়ে বিমান যোগাযোগের ব্যবসা এরইমধ্যে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
চীনের পর্যটকরা ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভিজিটব্রিটেন এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে কেবল যুক্তরাজ্যেই ৪ লাখ ১৫ হাজার চীনা পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। যুক্তরাজ্য ভ্রমণে চীনের পর্যটকরা মাথাপিছু গড়ে ১৬৮০ পাউন্ড ব্যয় করেন, যা অন্য দেশের পর্যটকদের প্রায় তিনগুণ।
ঘরে ঘরে খাদ্য মজুদ
চাল-ডাল-তেল থেকে শুরু করে টয়লেট পেপার, অরেঞ্জ জুসও মানুষ কিনে রেখেছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে।
চীনে উৎপাদনে ধস
ম্যানুফ্যাচারিং খাতে বিশ্বের তৃতীয় এবং পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষস্থানীয় দেশটিতে নিয়ন্ত্রণমূলক নানা পদক্ষেপের প্রভাব পড়েছে জেসিবি এবং গাড়ি প্রস্তুতকারী নিশান কোম্পানির মতো বড় বড় কোম্পানির সবরাহ ব্যবস্থায়।
ফলে দেশটিতে গাড়ি বিক্রিও পড়ে গেছে। ফেব্রুয়ারিতেই চীনে গাড়ি বিক্রির হার ৮৬ শতাংশ কমেছে। আর শোরুমে ক্রেতা কমে যাওয়ায় টেসলা এবং জিলির মতো নতুন কোম্পানিগুলো অনলাইনে গাড়ি বিক্রিতে ঝুঁকেছে।
নিরাপদ বিনিয়োগও অনিরাপদ
কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে মার্চে সোনার দামও হোঁচট খেয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিশ্ব মন্দার শঙ্কায় আছেন।
একই অবস্থা জ্বালানি তেলের দামেও। ২০০১ সালের পর বর্তমানে তেলের দাম সবচেয়ে কম।
বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা, ভাইরাসের বিস্তার বিশ্ব অর্থনীতি এবং তেলের বাজারকে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে।
ওপেক সদস্য দেশগুলো এবং রাশিয়া এমনিতেই কয়েক দফা জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস তা আরও কমাতে বাধ্য করেছে।
প্রবৃদ্ধিতে স্থবিরতা
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (ওইসিডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের বিশ্বমন্দার পর এ বছরই বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি এ বছর সবচেয়ে শ্লথ হয়ে যেতে পারে।
ওইসিডির ধারণা, এ বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে, যা গত নভেম্বরেও ২ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল।
আর করোনাভাইরাসের দাপট দীর্ঘায়িত হলে প্রবৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ শতাংশেও নেমে যেতে পারে তাদের আশঙ্কা।