করোনাভাইরাস: সমন্বিত জাতীয় কৌশল প্রণয়নের আহ্বান টিআইবির

নভেল করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় কৌশল প্রণয়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2020, 12:09 PM
Updated : 28 March 2020, 12:09 PM

সেই সঙ্গে জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশের সমপরিমাণ বিশেষ তহবিল গঠন এবং তা ব্যবহারে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ রোগ বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় মন্দা নিয়ে আসছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। এই মুহূর্তে দেশে রোগের বিস্তার ঠেকাতে সবাই ঘরবন্দি হয়ে আছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “হোম-কোয়ারেন্টিনে দেশবাসীকে পাঠিয়ে নিতান্তই অপ্রতুল ও বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে হাতগুটিয়ে বসে থাকার সময় নেই। কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি ও এর বহুমুখী প্রভাব কোনো তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য সমস্যা নয়।

“এখনই সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা সম্বলিত জাতীয় কৌশল চূড়ান্ত করতে হবে এবং একইসঙ্গে তার বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থের জোগানের পাশাপাশি বহুমুখী উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে।”

করোনাভাইরাসের প্রতিঘাত মোকাবেলায় রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি ডলারের তহবিলের ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি গরিব মানুষের জন্য ছয় মাস খাবারের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসকদেনর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “কীভাবে এর বাস্তবায়ন হবে, বরাদ্দকৃত অর্থ কোন প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের হাতে যাবে এবং এক্ষেত্রে কীভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এখনই নির্ধারণ করতে হবে।

“একইভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন, স্বল্প বেতনের কর্মজীবী মানুষ, দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন বা হবেন তাদেরকেও এর আওতায় আনতে হবে।”

অর্থনীতির চাকা পুনরায় দ্রুত সচল করার জন্য জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশ সমপরিমাণের বিশেষ তহবিল গঠন করার যে আহ্বান জানিয়ে টিআইবি, তাতে অর্থ জোগাতে মেগা-প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন আনুপাতিক হারে কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলের বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে তহবিল প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তার পুরোটাই জোগানোর দায়িত্ব কী এদেশের মহা-ধনীজন অনায়াসে নিতে পারেন না?”

চিকিৎসদের নিরাপত্তায় জোর দিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করা ও চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও তাদের অমূল্য অবদানের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে।”

সঙ্কট চলাকালীন খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ পথ সচল রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তা না হলে কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনই মানুষের ক্ষুধা ও মৃত্যুর কারণ হবে।”

সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নিয়োজিত পুলিশের একাংশের বিভ্রান্ত ও অশোভন বলপ্রয়োগ সঙ্কট ঘনীভূত করছে মন্তব্য করে তা বন্ধ করার দাবিও জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

এই পরিস্থিতিতে তথ্যের আদান-প্রদান অবাধ না করলে কিংবা তথ্য প্রকাশে রাখঢাক করা হলে গুজব ছড়াবে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থাহীনতা তৈরি করবে বলেও সরকারকে সতর্ক করেছে টিআইবি।