করোনাভাইরাসের অভিঘাত দাতাদের অর্থ ছাড়েও

বিশ্বজুড়ে মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি দাতাদের কাছ থেকে আসা বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ছাড়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে দাতাদের অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতিও।

জাফর আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2020, 09:54 AM
Updated : 28 March 2020, 01:32 PM

ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে প্রথম দেখা দেওয়া এই ভাইরাস এরইমধ্যে বিশ্বের দুইশ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অধিকাংশ ধনী দেশগুলোতেই জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।

এই ভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকেই বাংলাদেশকে বিদেশি অর্থ ছাড়ে টান পড়েছে বলে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আর ইতোমধ্যেই এর প্রভাব পড়েছে গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরের মোট হিসাবে।

চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্থ ছাড় প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে এবং দাতাদের কাছ প্রতিশ্রুতি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অপরদিকে দাতাদের আগের পুঞ্জিভূত পাওনা থেকে পরিশোধ করতে হয়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজে আঘাত হানতে শুরু করেছে গেল জানুয়ারি মাস থেকে। বিশেষ করে চীনসহ বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিতে ব্যাঘাত ঘটেছে।

“বিশেষ করে গত জানুয়ারি মাস থেকেই চীনা বিশেষজ্ঞরা কাজ করতে পারেননি। এর প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ছাড়ে।”

এরপরের বছর শেষের দিকে গিয়ে লক্ষ্য অনুযায়ী অর্থ ছাড় ও প্রতিশ্রুতি আদায় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ইআরডি সচিব জানান, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকার) বড় ধরনের একটি অর্থ ছাড় হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ‘শিগগির’ তা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

“ওই ছাড় সম্পন্ন হলে অর্থ ছাড় ঠিক হয়ে যাবে।”

এছাড়া গত ২৪ মার্চ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) একটি অর্থ ছাড় হলেও যা হিসাবে দেখানো হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “সব মিলিয়ে আগামী মাসের হিসাবেই বিদেশি অর্থ ছাড়ে একটা ইতিবাচক পরিস্থিতি দৃশ্যমান হবে।”

ইআরডি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রথম আট মাসে মোট বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ছাড় হয়েছে ৩৪৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল প্রায় ৪০৭ কোটি ৯৬ ডলার।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মধ্যে গত (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) দুই মাসে  বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ছাড় হয়েছে ৭৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।

ফাতিমা ইয়াসমিন বলছেন, অর্থবছরের এই সময়ে অর্থ ছাড় ‘আরেকটু বেশি’ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে তা হয়নি।

চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার প্রথমে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সম পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণের লক্ষ্য নিলেও শেষ পর্যন্ত চলতি মাসের মাঝামাঝি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে তা ৬২ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার ৭২৯ কোটি ডলার ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে।

ইআরডি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সরকার বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে মাত্র ৩২৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি আদায় হয়েছিল প্রায় ৬১৭ কোটি ডলারের। 

ইআরডি সচিব জানান, ইতোমধ্যে অনেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এদিকে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অর্থ ছাড় কমলেও সরকারের চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুদ ও আসল পরিশোধের হার ১০ শতাংশ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করেছে ১১০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে সুদ ও আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ৯৯ কোটি ডলার।