উপকূলে তিন ফসল ফলাবে সরকার

কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য প্রত্যাশিত ন্যায্য মূল্যে পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার উপকূলবর্তী এলাকায় তিন ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2020, 05:23 PM
Updated : 15 March 2020, 05:23 PM

রোববার ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন তিনি।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে, সেই ২১টি প্রতিশ্রুতির একটি হচ্ছে বাংলাদেশকে আমরা নিরাপদ ও পুষ্টিজাতীয় খাবারের নিশ্চয়তা দিতে চাই।

”এজন্য কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ করতে এবং কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে কাজ করছে সরকার।”

উপকূলে কৃষি উৎপাদন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “লবণাক্ত এলাকায় এখন ফসল উৎপাদন করছে বিজ্ঞানীরা।

”আমাদের দেশে যারা কৃষি নিয়ে কাজ করছে তারা এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলে। এখানে অনেক জমি পড়ে আছে, আমরা আশা করছি তিন ফসল করতে পারব।” 

কৃষিমন্ত্রী বলেন, “কৃষি যন্ত্রপাতিতে সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে, উৎসাহ টাকা দিচ্ছে। ১০ লাখ টাকা দাম হলে সরকার দেবে ৫ লাখ টাকা। 

“আর যদি উপকূলবর্তী এলাকায় দাম হয় ১০ লাখ টাকা সরকার দেবে ৭ লাখ টাকা। এটা কে দেয়? আওয়ামী লীগ সরকার দেয়। এটাই হলো আমাদের অর্জন, সাফল্য।”

সরকার কৃষির অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কৃষক রৌদ্রে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে অথচ তারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন করার চ্যালেঞ্জ আমরা অতিক্রম করেছি। এটি আমাদের অর্জন।”

বিএনপি আমলের চেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কৃষকের কাছে সার সহজলভ্য হওয়ার চিত্র তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “সারের দাম ২৫ টাকা কেজি ছিল। আর বিএনপি সরকারের আমলে যখন মানুষ রক্ত দিয়েছে তখন ছিলো ৯০ টাকা।

”তার থেকে করেছিলাম ২৫ টাকা। সেখান থেকে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে দাম ১৬ টাকা করা হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের সরকার কৃষকের কল্যাণে কাজ করছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন,  ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত এদেশে স্বৈরাচার সরকার ও সামরিক সরকার ছিলো।

“এই সময়ে গণতন্ত্রের নামে সামরিক শাসন জারি করে তারা এদেশ শাসন করে। তারা ছিলো জনগণ বিচ্ছিন্ন, কৃষক বিচ্ছিন্ন। তারা ছিলো কায়েমি শাসকদের প্রতিনিধি। ’৯৫ সালের বুলেটের জবাব ’৯৬ সালে এদেশের মানুষ দিয়েছিলো।

”ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ সরকার কৃষকের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় মাত্র ৫ বছরের দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ন হয়।”

কৃষিমন্ত্রী বলেন, “গত বছর বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছিলো। সব সময়ই উদ্বৃত খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে।

”আলুর উৎপাদন, ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৫০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। গত বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টন। দেশের চাহিদার তুলনায় ৩০ হাজার নয়, ৩০-৪০ লাখ আলু উৎপাদন বেশি উৎপাদিত হয়েছে।”

বিএনপি আর কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে সভায় দাবি করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া শুধু কৃষকের রক্ত নয়; শ্রমিক, ছাত্রের রক্ত নিয়েছে। ইতিহাস তার বিচার করতে ভুল করে না। আজকে খালেদা জিয়া শুধু দণ্ডিত আসামী নন, তিনি এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন, কারাগারে আছেন। এটাই হলো পাপের শাস্তি।

“তার ছেলে তারেক রহমান মানি লন্ডারিংয়ের অর্থ পাচারের অপরাধে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আজকে তারেকের পরিনতি কী? তারেক জিয়া বাংলার মাটিতে আসতে পারে না। বাংলাদেশে কোনো দিনই তারেক জিয়া আর ফিরে আসতে পারবে না। বিএনপি নামক এই দল, যে দল ১৮ জন কৃষকের জীবন নিয়েছে তারা আর কোনোদিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না।”

কৃষকের কাছে সার পোঁছে দেওয়ার সরকারের সাফল্যচিত্র তুলে ধরে আব্দুর রহমান বলেন, “বিএনপি সরকারের শাসনামলে ৫ কেজি সার আনতে সদর উপজেলায় যেতে হতো। দিনভর সারের জন্য মারামারি পুলিশের লাটিপেটা খেয়ে অবশেষে সার ছাড়াই তাদের বাড়ি ফিরতে হতো।

“আর শেখ হাসিনার অন্য সাফল্যের মধ্যে বড় সাফল্য হলো আজকে গ্রামে-গঞ্জে যে কোনো বাজারে যে কোনো হাটে এই সার কৃষককে খুঁজে বেড়ায়। এই সার আজ পর্যাপ্তই শুধু না, বিনামূল্যে সার বিতরণ পর্যন্ত করছে সরকার। এখানেই শেখ হাসিনার সাথে পার্থক্য। যতোদিন আওয়ামী লীগ সরকার আছে কৃষকের কোনো দুঃখ নেই।”

১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকারের শাসনামলে সারের দাবিতে বিক্ষোভরত ১৮ জন কৃষককে গুলি করে মারার ঘটনার স্মরণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কৃষক লীগ। 

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নিহত ১৮ পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।