বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার গল্প ‘যাদের হাত ধরে’

চেয়েছিলেন বাবার রেখে যাওয়া ৩০ শতাংশ জমিতে কৃষিকাজ করে অভাব আর দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়বেন। সেখানে ব্যর্থ হয়ে বেছে নিলেন আরও কঠিন এক পথ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2020, 06:42 PM
Updated : 7 March 2020, 01:03 PM

সাগর তীরবর্তী বরগুনার নারী লাইলি বেগম বহু বাধা আর প্রতিকূলতা অতিক্রম করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন একজন সমুদ্রচারী মৎস্যজীবী হিসাবে। বরগুনায় তিনিই একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত নারী জেলে।

শুক্রবার সন্ধ্যার পর লাইলির মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লড়াকু আরও আটজন নারীকে সম্মাননা জানানো হয় ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার ‘আনসাং ওমেন ন্যাশনাল বিল্ডারস অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ নামে এ সম্মাননার আয়োজন করে।

সম্মাননা জানানো হয় ঠাকুরগাঁওয়ের বীরাঙ্গনা টেপরী রাণী ও বরিশালের গৌরনদীর বীরাঙ্গনা বিভা রানীকে।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন টাঙ্গাইলের উত্তরণ শিশু শিক্ষালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুন্নাহার মুন্নি। নারীদের ফুটবল দল গঠনে নেতৃত্ব দিয়ে পেয়েছেন একের পর এক সাফল্য। খেলাধুলার মাধ্যমে মেয়েদের মাঝে আত্মবিশ্বাস জাগাতে এবং বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে অভিভাবকদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের টানাবাজারের সুইপার কলোনির সনু রানী দাস তাদের সমাজে প্রথম কোনো ব্যক্তি যিনি অর্জন করেছেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এখন কাজ করছেন দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে।

আছেন সিরাজগঞ্জের গৃহবধূ কোহিনুর বেগম। একবার ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ফিরে আসেন খালি হাতে। সেই থেকে তিনি নিজের বুদ্ধিতে গ্রামের ৪৫ জন নারীকে নিয়ে গড়ে তোলেন ফুড ব্যাংক। যাতে বিপদের সময় মানুষ অভুক্ত না থেকে ওই ব্যাংক থেকে ঋণ হিসাবে খাবার পেতে পারে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার দাশিয়ারছড়া সিটমহলবাসীকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে নিজের উদ্যোগে পাঠাগার গড়ে তুলে সফল হয়েছেন মমতাজ মহল বেবি। পুরস্কারের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ থেকে ফিফার রেফারি দলে ডাক পাওয়া একমাত্র নারী জয়া চাকমা। ফরিদপুরের দৃষ্টিহীন নারী মারজিয়া রব্বানী শশী, ‍যিনি অন্যের সহযোগিতা নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে একজন আইনজীবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, “আজকের অনুষ্ঠানে আমরা নয়জন নক্ষত্রের দেখা পেলাম, যারা জীবন সংগ্রামে কঠিন সব ধাপ অতিক্রম করে আমাদের পথ দেখিয়েছেন। তাদের জীবন কাহিনী জেনে নিজেকে আজ অতি ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে। তাদের আত্মপ্রত্যয় আমাদের প্রত্যেককে উৎসাহিত করছে।”

আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুমিনুল ইসলাম বলেন, “ব্যবসার সূচকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে থাকলেও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সারা বিশ্বে রোল মডেল। উন্নয়নের এই প্যারাডক্সের পেছনে গল্প খুঁজতে হলে এ ধরনের নারীদের খুঁজতে হবে। বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার গল্প এ ধরনের নারীদেরই গল্প।”