এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আহসান মনসুর বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ এপ্রিল থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতেও ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এতে কোন ব্যাংক আর এসএমই খাতে ঋণ দিতে এগিয়ে আসবে না। কেননা, এসএমই খাতে ঋণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে; জামানত ছাড়া ঋণ দিতে হয়। পরিচালন ব্যয়ও বেশি। সে কারণেই এ খাতের সুদের হার বেশি হয়ে থাকে।“
বর্তমানে অনেক ঋণে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ কার্যকর রয়েছে। এসএমই ঋণের সুদের হার আরও বেশি।
আহসান মনসুরের আশঙ্কা, ৯% সুদ বেঁধে দেওয়া হলে এসএসই খাতে ঋণ দেওয়াই বন্ধ করে দেবে ব্যাংকগুলো, ফলে বিপাকে পড়বেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
তিনি বলেন, “এই সহজ-সরল হিসাব, বাস্তব অবস্থাটা সরকারের নীতি-নির্ধারকরা কেন বুঝতে পারছেন না, সেটাই আমার কাছে অবাক লাগছে। আমি পরিষ্কার করে বলছি, একটা হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে আমাদের এসএমই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
ক্রেডিট কার্ড ছাড়া ব্যাংকের সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। গত দুই বছর ধরে ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অংকে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়ে আসছিল সরকার।
কিন্তু সুদের হার না কমানোয় কয়েক দফা বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংক মালিকদের সমালোচনা করেছেন।
কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সেই আপত্তি আমলে নেয়নি।
এদিকে ৯ শতাংশ সুদহার বেঁধে দেওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। সার্কুলার জারির পর ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দম পড়ে গেছে। যে সব ব্যাংক এসএমই খাতে বেশি ঋণ দেয় সেগুলোর দাম বেশি কমেছে
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এসএমই খাতে সেবচেয়ে বেশি ঋণ দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। সার্কুলার জারির পর থেকেই ব্যাংকটির শেয়ারের দাম কমছে।
সোমবারও ১ টাকা ২০ পয়সা বা ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দর।
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর উম্মা প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুবই স্বাভাবিক। কোন কিছু বিচার-বিশ্লেষণ, হিসাব-নিকাশ না করে জোর করে একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হবে; আর সব কিছু ঠিকঠাক থাকবে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।”
“প্রথমত আমি বলতে চাই, মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশে চাপিয়ে দিয়ে সুদের হার কমানোর ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। সরকারি ব্যাংকগুলো কমালেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো কমাতে পারবে বলে মনে হয় না।
“সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সবকিছুই যেখানে বাজারের উপর; সেখানে সুদের হারও বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।”
“আর এসএমই ঋণের খরচ আরও বেশি। গ্রামাঞ্চলে শাখা খুলে ঋণ দিতে হয়। ঝামেলা বেশি, ঝুঁকি বেশি। ৯ শতাংশ সুদে এসএমই ঋণ কোনও ব্যাংকই দিতে পারবে না। সে অবস্থায় গত এক-দেড় দশকে এসএমই খাতের যে বিকাশ হয়েছিল তা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই আমরা ভোক্তা এবং এসএমই খাতের ঋণ যেনো ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়া না হয়, সেজন্য অনুরোধ করেছিলাম। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেমনটা বলেছে, আমরা সেটাই মেনে চলব।
“তবে সত্য কথা হচ্ছে, এসএমই খাত অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী, এসএমই খাত বাংলাদেশের জিডিপিতে ২০ থেকে ২২ শতাংশ অবদান রাখে।
ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে।