অযৌক্তিক ব্যয়ের ভার জনগণের উপর চাপানো হল: ক্যাব উপদেষ্টা   

আবাসিক বা শিল্পখাত, কোনো পর্যায়ের ভোক্তার জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখছেন না ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2020, 12:50 PM
Updated : 27 Feb 2020, 03:21 PM

তিনি বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে ‘অযৌক্তিক’ ব্যয় না কমিয়ে সরকার জনগণের ব্যয়ভার বাড়িয়ে দিয়েছে।

পাইকারি, খুচরা ও সঞ্চালন- তিন ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই প্রতিক্রিয়া জানান ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “ভোক্তা যে মানের বিদ্যুৎ পায়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য পুনরায় নির্ধারণ হোক, সেটা আবাসিক বা শিল্পক্ষেত্রে একইভাবে… এমনটি চেয়েছিলাম আমরা।

“কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আগের ধারাবাহিকতায় গতানুগতিক ঐকিক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে। কোনো পর্যায়ের ভোক্তার জন্যই মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা এ আদেশে প্রতিফলিত হয়নি।”

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), নতুন হার মার্চ মাস থেকে কার্যকর হবে।

সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ টাকা ১৩ পয়সা।

ফাইল ছবি

পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট গড়ে ৪০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। ৪ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে বেড়ে প্রতি ইউনিটের দাম হয়েছে ৫ টাকা ১৭ পয়সা।

এছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন মূল্যহার বা হুইলিং চার্জ প্রতি ইউনিটে শূন্য দশমিক ২৭৮৭ টাকা থেকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে শূন্য দশমিক ২৯৩৪ টাকা।

দুই বছর পর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল নানা ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমদানি করা কয়লার ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ওপর ১০ পয়সা করে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা হয়েছে, অবচয় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ বেড়েছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোকে তুলনামূলক কমমূল্যে অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের কাছে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোতে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে এই কারণগুলোর ভূমিকা ছিল।”

দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে বিইআরসির গণশুনানিতে ক্যাবও দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছিল।

শামসুল আলম বলেন, “গণশুনানিতে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলাম।

“বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় যেভাবে অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে, সেসব প্রতিবিধানের কথা আমরা বলেছিলাম। ৯ হাজার কোটি টাকার উপরে অযৌক্তিক ব্যয় যদি সমন্বয় করা হত, তাহলে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির দরকার হত না।”

গণশুনানিতে ক্যাবের উপদেষ্টা বলেছিলেন, “কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর প্রয়োজন না থাকলেও সেগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। এই কারণেই পিডিবির ঘাটতি বাড়ছে। এ ধরনের কাজের দায়ভার চাপানো হচ্ছে জনগণের ওপর।”

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান বিদ্যুৎ খাতেও চালানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন অধ্যাপক শামসুল।

তিনি বলেছিলেন, “সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিপিসির দেওয়া তেলে চলতে পারলেও বেসরকারি কেন্দ্রগুলো নিজেরা পৃথকভাবে তেল আমদানি করে। ফলে সেখানে অনেক বেশি বাড়তি খরচ হয়। এসব খরচ বিদ্যুতের উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দেয়।

“এছাড়া নিজেরা তেল আমদানির নামে বহু রকমের দুর্নীতি হয়। বিপিসির তেলের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে সেটার সমাধান করা উচিত। বেসরকারিভাবে তেল আমদানির এই ফাঁদ দুর্নীতির একটি উৎস। এই উৎস বন্ধ করতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে ঘাটতির প্রকৃত পরিমাণ হিসাব না করে, সেই হিসাব বিবেচনায় নিয়ে যদি ব্যয় বাড়ানো হয়, সেটা জনগণের সঙ্গে অন্যায় করা হবে।”

সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার, যা ওই বছর ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

গত বছরের জুনের শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দুই মাসের মাথায় বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর জন্য বিইআরসিতে প্রস্তাব পাঠাতে শুরু করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। এসব প্রস্তাবের ওপর গত ২৮ নভেম্বর শুরু হয় গণশুনানি।

নিয়ম অনুযায়ী গণশুনানির ৯০ দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানাতে হয় বিইআরসিকে। ৯০ দিন পূর্ণ হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই দাম বাড়ানোর ঘোষণা এল।