খেলাপি ঋণ কমিয়েছে সোনালী ব্যাংক

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2020, 01:51 PM
Updated : 5 Feb 2020, 02:43 PM

তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকটিতে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ ৭ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে তা ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “আমরা খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছি। গত এক বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছি। এর মধ্যে ৮০০ কোটি টাক নগদ। আর এতে এখন সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কমে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৮ সালে ছিল ২৬ শতাংশ।”

এ হিসাবেই এক বছরে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৭ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে বলে জানান আতাউর রহমান।

“খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাই এ মুহূর্তে সোনালী ব্যাংকের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। আমরা সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি দিয়েছি ক্লাসিফাইড লোনকে কমিয়ে আনাকে।”

ব্যাংকের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা পরিচলন মুনাফা করেছে। ২০১৮ সালে এই মুনাফার পরিমাণ ছিল ২ হাজার কোটি টাকা কিছু বেশি।

নয়-ছয় সুদের হার সবার আগে বাস্তবায়নের কারনে মুনাফা কমেছে বলে জানান প্রধান।

‘সোনালী ব্যাংকে সেবার মান আগের থেকে অনেক ভালো’ দাবি করে তিনি বলেন, “অনলাইন ব্যাংকিংয়ে যাওয়াতে দেশে এবং দেশের বাইরে সব জায়গায় এখন সমান ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে। আগে এটা সম্ভব ছিল না।

“এখন আমরা দেশের সব প্রান্তে একই ধরনের সেবা দিতে পারছি।আমাদের অনলাইন ব্যাংকিংটা চালু হয়েছে পরিপূর্ণভাবে। ফলে আমরা ইউনিয়ন লেভেলে যে সেবাটা দিচ্ছি সেটা ঢাকাতেও দেওয়া যাচ্ছে। ঢাকার সেবাটা ইউনিয়ন লেভেলে দেওয়া যাচ্ছে।”

বেসরকারি এবং সরকারি ব্যাংককে এক পাল্লায় তুলনা না করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করে আতাউর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রের জন্য অনেক কিছু করেছে এবং করে যাচ্ছে।রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তাদের খেলাপি ঋণ অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছে। তা থেকে রাষ্ট্র উপকৃত হয়েছে।”

“স্বাধীনতার পর থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দেশকে সেবা দিয়েছে। সে সময় ৭ কোটি মানুষ ছিল; এখন ১৭ কোটি। ব্যাংকের টাকা কৃষি খাতে গেছে।সেই সময়ের বিনিয়োগের ফলে আজকে আমরা ১৭ কোটি মানুষ খেতে পারছি।

“এতে সোনালী ব্যাংকের অনেক বড় অবদান রয়েছে। ব্যাংকে টাকা যেটা ক্লাসিফাইড আছে সে টাকায় কিন্তু মাঠ সবুজ হয়েছে। কৃষকের ঘরে গোলাভরা ধান হয়েছে।খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। খাদ্য আমরা রপ্তানি করছি।”

“আমরা যখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিয়ে সমালোচনা করি, তখন কিন্তু এ বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার। কিভাবে এত টাকা ক্লাসিফাইড হল, অর্থনীতিতে এই ব্যাংকগুলোর কি অবদান? এগুলো যদি চিন্তা না করা হয় তাহলে কিন্তু সঠিক হবে না”, বলেন তিনি।

আতাউর রহমান বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে শিল্প ঋণ দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু তখন ব্যাংকাররা যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন না এবং উদ্যোক্তারাও দক্ষ ছিলেন না।

“আপনার লক্ষ করে দেখবেন সেই সময় নেওয়া বেশিরভাগ ঋণ কিন্তু ক্লাসিফাইড হয়েছে।এর কারণ আমাদের দুই পক্ষেরই তখন অভিজ্ঞতার অনেক অভাব ছিল। ভালো ব্যাংকারও ছিলনা; ভালো উদ্যোক্তা ছিল না। কিন্তু শিল্পায়ন হয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সেবার মান ভালো স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, দেশের ৬০ শতাংশ মানুষের অ্যাকাউন্ট সরকারি ব্যাংকে। এই ৬০ শতাংশ গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে মাত্র পাঁচটি ব্যাংক। আর বাকি ৪০ শতাংশকে সেবা দিচ্ছে ৫০টি বেসরকারি ব্যাংক।

“ফলে সেবার মান এক নাও হতে পারে।এখানে আরেকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।বেসরকারি ব্যাংকে ৫০০ টাকাতেও ব্যাংক হিসাব খোলা যায় না। আর আমারা কৃষকদের ১০ টাকাতেও অ্যাকাউন্ট খুলে দিচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ২০২০ সালে সোনালী ব্যাংকের অঙ্গীকার তুলে ধরে বলেন, “আমাদের এবারের শ্লোগান ‘দৃপ্ত শপথ মুজিববর্ষে, আমরা যাবো সবার শীর্ষে।”

“আর শীর্ষে আমরা যেতে চাই সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে।”

সেবার মান খারাপের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ১ হাজার ২২৪ শাখায় সোনালী ব্যাংক সেবা দিচ্ছি ১৯ হাজার লোক দিয়ে। সেখানে ইসলামী ব্যাংক ৩০০ শাখায় সেবা দিচ্ছে ২০ হাজার লোক

“তবে এ সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত আমরা প্রায় পাঁচ হাজার লোক নিয়েছি। জনবলের ঘাটতি আমরা পূরণ করতে পেরেছি।প্রযুক্তির দিক থেকে আমরা পিছিয়ে ছিলাম; সেই সমস্যাটাও সমাধান করতে পেরেছি।”