সোমবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে উদ্ধৃত করে ফিরোজ রশীদ বলেন, “অর্থ খাতে দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের সফলতা ম্লান হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংক খাতে। একজন বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন করে তদন্ত করে দেখা হোক কারা জনগণের গচ্ছিত টাকা নিয়ে গেছে।”
খেলাপি ঋণের বোঝা আর অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কথা হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরেই। গত মাসে সংসদের পশ্নোত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মালিকদের নিজেদেরই প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকার অপরিশোধিত ঋণ রয়েছে, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ শতাংশের বেশি।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “এটা সত্য যে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে, এ কারণে উন্নয়ন করতে পারছে সরকার।”
জাপার এই সাংসদ দাবি করেন, “সরকারের উন্নয়নের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান জাপার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাপা না গেলে নির্বাচন হত না। তাহলে সরকার হত না। গণতন্ত্র, সংবিধান থাকত না।”
ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে কঠোর আইন করার দাবি জানিয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, “সাক্ষীর অভাব ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে ধর্ষণের শাস্তি হয় না। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করে শাস্তি দিতে হবে।”
এর আগে ধর্ষণকারীদের ‘ক্রসফায়ারে দেওয়ার’ দাবি জানিয়ে সংসদে বক্তব্য দিয়েছিলেন ফিরোজ রশীদ। সে সময় বিভিন্ন মহলে তার বক্তব্যের সমালোচনা হয়।
তবে জাতীয় পার্টির এই নেতার এখনকার ভাষ্য, সে সময় তিনি ‘আবেগতাড়িত হয়ে’ বক্তব্য দিয়েছিলেন, আসলে তিনি ‘কঠোর শাস্তি’ চেয়েছিলেন।
মানবাধিকারকর্মীদের সমালোচনা করে বলেন, “ কিছু মানবাধিকার কর্মী এই বক্তব্য নিয়ে অনেক বাহাস করেছেন। শিশু রাসেলকে যখন হত্যা করা হয়েছিল, তখন তারা সবাই চুপ ছিলেন।”
ধর্ষণকারীদের ‘বন্দুক যুদ্ধে’ হত্যা করা নিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদের বক্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
তার সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করি, আপনারা কত লোক মেরেছিলেন গুলি করে? আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের? হাজার হাজার কর্মীকে আপনারা মেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। থানা, ফাঁড়ি লুট করেছিলেন।
“সেদিন যদি আপনার এগুলো না করতেন বঙ্গবন্ধুকে মারার দুঃসাহস কেউ করত না। আপনার মারার পথ রচনা করে দিয়েছিলেন। আমি একটা কথা বলেছি সেটা আমার অশুদ্ধ হয়ে গেছে। উনি গুলির বিরুদ্ধে কথা বললেন। উনারা যে কথা বলেন কান্নাকাটি করেন- উনাদের ভাষা বুঝি।”
সিটি নির্বাচনে ভোটের হার কম ‘বিএনপির কারণে’
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে দুদিন আগে হয়ে যাওয়া ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের হার কম হওয়ার জন্য বিএনপিকে দায়ী করন তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
ঢাকা সিটি নির্বাচনকে উপমহাদেশের ইতিহাসে ‘চমৎকার নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ইভিএমের বিরুদ্ধে অবস্থানসহ বিএনপির ‘নেতিবাচক প্রচারণায়’ মানুষের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়। তাতে অন্তত ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোট কমেছে।
কলকাতা সিটি নির্বাচনে সংঘাতের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বিজেপির প্রার্থী রূপা গাঙ্গুলিকে স্টেট থেকে পালিয়ে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ হয়ে থাকতে হয়। ওই নির্বাচনে বেশ কয়েকজন লোকক্ষয় হয়। সেই বিচার করলে ঢাকা সিটির নির্বাচন যে কোন বিচারে উপমহাদেশের এটি চমৎকার ও ভালো নির্বাচন হয়েছে।”
ঢাকার ভোটের হার নিয়ে যারা কথা তুলছেন, তাদের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “কাগজে দেখছি লিখছে- নির্বাচনে কম সংখ্যক লোক ভোট দিতে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভোটার যোগ্য মানুষের ৬০ ভাগ নিবন্ধিত হয়। আর সেই ৬০ ভাগের ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কাস্ট হয়। মোটের ওপর ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়।
“আর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৯ শতাংশ এবং উত্তর সিটিতে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই ভোটের হার অনেক বেশি হত। ইভিএমের বিরুদ্ধে অবস্থানসহ প্রথম থেকে বিএনপির নেতিবাচক প্রচারণায় মানুষের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়। আমি মনে করি এতে অন্তত ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোট কমেছে।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি প্রথম থেকেই বলে আসছে, তারা এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছে।… তাদের আন্দোলন মানে হাঙ্গামা-ভোট কেন্দ্র জ্বালানো। কাজেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাদের ভোটে অংশ নেওয়ার খবরে মানুষ শঙ্কিত হয়ে যায়। নির্বাচনের মাঠে থাকাকে বিএনপি যখন সফলতা বলে, তখন মানুষ মনে করবে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে হয়ত সরে গেছে। এতে মানুষ ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।”
সার্বিকভাবে ভোট নিয়ে মানুষ ‘আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে’ বলে যে মন্তব্য কেউ কেউ করছেন, তা ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করেন হাছান মাহমুদ।
অন্যদের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, শাজাহান খান, সাইমুম সারওয়ার কমল, ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, সংরক্ষিত আসনের নাহিদ ইজাহার খান ও অপরাজিতা হক আলোচনায় অংশ নেন।