ঋণ প্রবাহ বাড়াতে মুদ্রানীতি সংশোধন

মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্য বাড়িয়ে মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2020, 04:31 PM
Updated : 19 Jan 2020, 04:31 PM

গত জুলাই মাসে ঘোষিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ (ব্রড মানি) বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। রোববার তা বাড়িয়ে ১৩ শতাংশ করা হয়েছে।

পুঁজিবাজারসহ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

“সার্বিক অর্থ ও ঋণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নীতি সুদ হার কোন পরিবর্তন না এনে, সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নতি ও দেশের পুঁজিবাজারসহ বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষে, উল্লিখিত মাত্রায় ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”

বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঘোষিত আর্থিক নীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে এতোদিন প্রতি অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করত কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চলতি অর্থবছর থেকে একটি ঘোষণা করা হচ্ছে। মাঝপথে এসে রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংশোধন আনা হলো।

সংশোধিত মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বেশ খানিকটা বাড়ানো হয়েছে।

জুলাইয়ে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সংশোধিত মুদ্রানীতিতে তা ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে ‘ইতিবাচক’ মন্তব্য করে অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্রড মানি সার্কুলেশন বৃদ্ধির ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়বে। এর ফলে পুঁজিবাজারসহ বেসরকারি খাতেও ঋণ প্রবাহ বাড়বে।

“এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণ এবং আমানতের নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়ন করা হবে। তখন বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়বে। সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে।”

“বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এই নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি খাতে যেমন টাকার প্রবাহ বাড়বে; তার একটা অংশ পুঁজিবাজারেও যাবে।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, , গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে মনিটারি পলিসি কমিটির  (এমপিসি)  ৪৫তম সভায় সরকারকে আরও ব্যাংকঋণ দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত এই সভায় বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির ওপর  আলোচনা করা হয়।

এরপর চলতি (২০১৯-২০১০) অর্থবছরের মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়েও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে, এই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ১০ শতাংশ।

জানা গেছে, ব্যাংকিং খাত থেকে পুরো অর্থবছরের জন্য ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার, গত ছয় মাসেই তার চেয়ে বেশি নিয়েছে।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক  থেকে ঋণ নেওয়ার কথা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অথচ প্রথম ছয় মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ৪৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ও অতিসম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বৈশ্বিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে উৎপাদনশীল খাতের প্রবৃদ্ধিও প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। তবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেবা খাতের শেয়ার বেশি হওয়ার পাশাপাশি রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ার ফলে এ খাতের সাফল্য ইতিবাচক রয়েছে।

“সার্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি থাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ পরিস্থিতির কাক্ষিত উন্নতির ফলে অর্থবছর শেষে তা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিই থাকবে।”