পদ্মা সেতু: মূল কাঠামোর ৮৫.৫% কাজ শেষ

দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল কাঠামোর ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2020, 12:44 PM
Updated : 19 Jan 2020, 12:44 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্বে রোববার তার কার্যালয়ে ‘ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির’ পঞ্চম সভায় পদ্মা সেতুসহ অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত ১০টি প্রকল্পের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়।

মোট ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো। গত ১৪ জানুয়ারি ২১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর অর্ধেকের বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। 

ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির সভায় জানানো হয়, মূল সেতুর নির্মাণ কাজের ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পুরো পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পুরো কাজের ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

এর মধ্যে সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজ ১০০ শতাংশ, মাওয়া প্রান্তে এপ্রোচ রোডের কাজ ১০০ শতাংশ, জাজিরা প্রান্তে এপ্রোচ রোডের কাজ ৯১ শতাংশ এবং নদীশাসনের কাজ ৬৬ শতাংশ শেষ হয়েছে।

দ্বিতল এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে। মূল কাঠামোর দুই প্রান্তে আরও প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকছে। তাই পুরো সেতুর দীর্ঘ দাঁড়াবে প্রায় নয় কিলোমিটার।

৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু ২০২১ সালের জুনে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন।

পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ঝামেলা গেছে আপনারা জানেন। আমরা আনন্দিত অর্ধেকের বেশি হয়ে গেছে।”

অন্যান্য প্রকল্পের অগ্রগতির চিত্র

সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা দশটি প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের প্রি-ইনসপেকশন শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাজকে ৩৪৪টি অংশে ভাগ করে বাস্তবায়নের কাজ চলছে বলে সভায় জানানো হয়। 

বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ।

মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ২০টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, বন্দর নির্মাণ, এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ অন্যতম।

সভায় জানানো হয়, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪০ দশমিক ০২ শতাংশ। 

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৮ সালের অগাস্ট থেকে বাণিজ্যিভাবে গ্যাস সরবরাহও শুরু হয়েছে।

গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রারম্ভিক কাজ ও মালামাল সংগ্রহের কাজ ইতোমধ্যে পুরো শেষ হয়েছে। তাছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি হুকুম দখলের কার্যক্রম ৯০ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি প্রকল্পের পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ গড়ে ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, ‘সাগরের সম্পদ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার’ স্বার্থে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৫৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এছাড়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামোর ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ, দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেল ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামোর ৩৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

দেশের যে কোনো নদীতে সেতু নির্মাণের আগে সেই নদীর চরিত্র সম্পর্কে জানার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সভায় বলেন, “নদী বর্ষাকালে কী রূপ ধারণ করে, শীতকালে কী রূপ ধারণ করে- এগুলো জেনে নিয়ে করা উচিত। নদীকে শাসন করতে গেলে সে শাসন সে মানবে না। সব নদী সব শাসন মানে না। সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।”

এ প্রসঙ্গে পদ্মা নদীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সেতুটা করার সময় নদী শাসন করে আমি কিন্তু নদী ছোট করতে দিইনি। পদ্মা নদীর চরিত্র সম্পর্কের কারো জানা নেই। এই নদীটা অসম্ভব ভাঙনপ্রবণ। এখানে বাঁধ দিয়ে ছোট করতে গেলে এই নদী মানবে না। আমাদের ব্রিজটাই বড় করতে হবে। এখানে জায়গাও রাখতে হবে বাফার জোনও থাকবে, যাতে বন্যার পানিটা ধারণ করতে পারে।”

ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্প ছাড়াও অন্য বড় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে ‘ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটি’কে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা সেগুলোতো মনিটর করবই, ভবিষ্যতে আমার মনে হয় এই কমিটি থেকে শুধু এই কয়েকটা দেখলে হবে না, আরও অনেকগুলো প্রজেক্ট আছে যেগুলো দেখতে হবে।”

সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ‘নষ্ট হয় না’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ যে অন্তত তারা আমাদের এইটুকু সুযোগ দিয়েছে, আমরা পরপর এবার নিয়ে তৃতীয় বার এসেছি। তাতে আমাদের উন্নয়নের কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে পারছি এবং মানসম্মতও করতে পারছি।”

অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী,  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।