৫ মিনিটে হিসাব খুলতে নীতিমালা জারি

ঘরে বসে মাত্র পাঁচ মিনিটে ব্যাংক হিসাব খোলার নীতিমালা জারি করেছে আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2020, 04:31 PM
Updated : 8 Jan 2020, 04:31 PM

বুধবার জারি করা এ নীতিমালার আলোকে পুঁজিবাজারের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবও খোলা যাবে পাঁচ মিনিটে।শুধু তাই নয়, বীমা পলিসিও খোলা যাবে এই অল্প সময়ে।

নীতিমালাটি সব ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান,স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট ও মার্চেন্ট ব্যাংক, সিকিউরিটিজ কাস্টডিয়ান, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিক্রমে ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে পরিপালন করতে বলা হয়েছে।

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে ‘ইলেকট্রনিক নো ইওর কাস্টমার (ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি বা ই-কেওয়াইসি’ শীর্ষক এই নীতিমালাটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেওয়াইসি এর অর্থ হল আপনার গ্রাহককে জানুন। এতোদিন হাতে-কলমে (ম্যানুয়াল) কেওয়াইসি ফরম পূরণ করে ব্যাংক হিসবাবসহ অন্যন্য হিসাব খোলঅ হতো। তাতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগতো। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যেতে হতো। এখন ই-কেওয়াইসি এর মাধ্যমে সব সম্পন্ন হবে। আর তাতে সময় লাগবে মাত্র পাঁচ মিনিট। ঘরে বসেই এ সব করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউ যুগ্ম পরিচালক আব্দুর রব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সহজ হলো হিসাব খোলা। ঘরে বসেও হিসাব খোলা যাবে মাত্র পাঁচটি ধাপে, পাঁচ মিনিটে।”

“শুধু ব্যাংক হিসাব নয়; শেয়ার বাজারের বিও হিসাব এবং বীমা পলিসিও খুলতে হবে এই ই-কেওআইসি গাইডলাইন মেনে।”

তিনি বলেন, নতুন এ সেবার ফলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সহজেই ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসবে। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।

“এর ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। গ্রাহক হয়রানি ও ব্যয় কমবে।”

যেভাবে হবে ই-কেওয়াইসি

মূলত পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হবে পুরো ই-কেওয়াইসি প্রক্রিয়া। প্রথমে হিসাব খুলতে আসা ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ বায়োমেট্রিকের (আঙুলের ছাপ, মুখমণ্ডলের ছবি বা আইরিশ) মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। এ প্রক্রিয়া কোনো ব্যাংকের শাখায় বা এজেন্টদের কাছে থাকা ট্যাবে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। তখন নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডার থেকে তাৎক্ষণিক যাচাই হবে গ্রাহকের পরিচিতি।

পরিচয় নিশ্চিত হলে গ্রাহকের নাম, মা-বাবার নাম, লিঙ্গ, পেশা, মোবাইল ফোন নম্বর, ঠিকানা, মনোনীত ব্যক্তির (নমিনি) পরিচয় উল্লেখ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেওয়াইসি ফরমে চলে আসবে। পরে গ্রাহকের ছবি তোলা হবে। এরপর হিসাব খোলার বিষয়ে গ্রাহককে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠাবে ব্যাংক। গ্রাহক বার্তা পাওয়া মানেই হিসাব খোলা সম্পন্ন। কাগজপত্র ছাড়াই পুরো কাজটি হবে অনলাইনে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ই-কেওয়াইসি এর মাধ্যমে ব্যাংক বা আর্থিক সেবা গ্রহনে হিসাব খোলা বা পুজিবাজারের বিও হিসাব খোলা বা বিমা সংক্রান্ত পলিসি খোলার বিদ্যমান প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

“নীতিমালার নির্দেশনা অনুযায়ী ই-কেওয়াইসি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী যে কোন ব্যক্তি মাত্র ৫মিনিটের মধ্যে এখন ব্যাংক হিসাব বা বিও হিসাব বা বিমা পলিসি খুলতে পারবেন।

“এতে গ্রাহকপ্রতি হিসাব খোলা ও কেওয়াইসি সংরক্ষণের খরচও প্রায় ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ কমে যাবে।”

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতি ঘরে ঘরে স্বল্প খরচে আর্থিক সেবা প্রদানের পথে সহায়ক হবে ই-কেওয়াইসি প্রক্রিয়া। এছাড়াও এর ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন, আর্থিক খাতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থায়নের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

 ই-কেওয়াইসি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একজন গ্রাহক আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অথবা আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা এজেন্ট গ্রাহকের বাসায় উপস্থিত হয়ে অথবা একজন গ্রাহক ঘরে বসে নিজে নিজেই আর্থিক হিসাব খুলতে পারবেন। ফলে ই-কেওয়াইসি চালুর কারনে অতি সহজেই আর্থিক সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর প্রক্রিয়া আরও একধাপ এগিয়ে গেল বলে উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায় ।

সম্প্রতি সরকার ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র’ প্রকাশ করেছে সরকার। সেই কৌশলপত্রের আলোকেই এই নীতিমালা জারি করা হয়েছে।

ই-কেওয়াসি চালুর পূর্বে বিএফআইইউ ১৯টি ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও একটি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ে ৩৩টি জেলার ৫২টি স্থানে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।

উক্ত পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে এবং বিভিন্ন অংশীজনদের সুপরিশের ভিত্তিতে এই গাইডলাইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।