এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
আর ২০১৯ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে এই ডিসেম্বরে।
এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে বাংলাদেশ; বিদায়ী বছরের মে মাসে।
আর রেমিটেন্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারায় রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কার পরও বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে।অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নমুখী। এই ‘বৈরি হাওয়ার’ মধ্যে একমাত্র রেমিটেন্সই আশার আলো ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।
দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, রেমিটেন্সে সুবাতাস বইছেই। এই ছয় মাসে গড়ে ১৫৭ কোটি ডলার করে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
“আর এই রেমিটেন্স আমাদের অর্থনীতির ভিত মজবুত রাখতে অবদান রাখছে।”
প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ অন্য দেশেগুলোর মতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমালে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রেমিটেন্স আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
বাংলাশে ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ‘সুখবর’ নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছর।
প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।অগাস্টে আসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
অক্টোবর মাসে আসে ১৬৪ কোটি ডলার।যা ছিল এক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। নভেম্বর মাসে এসেছিল ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।
রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।প্রবাসীরা এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি ঔ ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন।
বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ আশা করছেন ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সর পরিমাণ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
১৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। প্রণোদনা দেওয়ায় এবার প্রবাহ খুবই ভালো।অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একমাত্র রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির অন্য সব সূচকের অবস্থা এখন খারাপ। রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। রাজস্ব আদায় কমছে। মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী।চাপে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ।আমদানিও কমছে।বিনিয়োগে খরা কাটছে না।ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পাহাড়।শেয়ারবাজারে তো মন্দা লেগেই আছে।
“সে কারণেই বলা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই এখন সচল রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা।তবে এই ধারা ধরে রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে
“এখানে একটা বিষয় আমি পরিস্কার করে বলতে চাই, প্রণোদনা বা ভর্তুকি দিয়ে রেমিটেন্সর ইতিবাচক ধারা ধরে রাখা যাবে না। আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা যাতে বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটা শুধু দক্ষ শ্রমিক পাঠালেই সম্ভব হবে।অন্য কোনো পথে নয়।”
রিজার্ভ ৩২.৭ বিলিয়ন ডলার
রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।বুধবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
গত দেড় মাসে তা বেড়ে আবার আগের অবস্থানকে ছাড়িয়ে গেছে।
তবে চলতি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নভেম্বর-ডিসেম্বরের আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ আবার ৩২ বিয়িন ডলারের নিচে নেমে আসবে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।