বেনাপোলে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় কমেছে

বেনাপোল শুল্কভবনে চলতি অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় পৌনে ১২শ কোটি টাকা কমে গেছে।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2019, 11:39 AM
Updated : 28 Dec 2019, 11:39 AM

বেনাপোল শুল্কভবনের প্রোগ্রামার (কর্মকর্তা) আক্তারুজ্জামান বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল দুই হাজার ৪২৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তার বিপরীতে এ সময়ে আদায় হয়েছে এক হাজার ২৫২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। 

বিগত অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল এক হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে রাজস্ব আদায় হ্রাস পেয়েছে ২৮ দশমিক ২৬ শতাংশ।

বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা অবকাঠামোসহ নানা অনিয়মের কারণে রাজস্ব আদায় কমার অভিযোগ করলেও শুল্ক বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা।

শুল্ক বিভাগ বলছে, শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য কম আমদানি হওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।

বেনাপোল বন্দর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট আ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, বৈধভাবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্য বন্দরের তুলনায় শুল্ক বেশি আরোপ করায় পণ্য কম আমদানি হচ্ছে; সে কারণে রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে।

দেশের সব বন্দরে আমদানি পণ্যের উপর রাজস্ব পরিশোধের নিয়ম এক হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে যে পণ্যের শুল্ক চার ডলার ধরা হয়, বেনাপোল বন্দরে তার শুল্ক ধরা হয় সাড়ে চার ডলার।

“দেশের অন্য বন্দর থেকে বেনাপোলে বেশি মূল্যে শুল্কায়ন করা হয়। এ কারণে অনেক বৈধ আমদানিকারক বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি করতে অনীহা প্রকাশ করছেন।” 

ওই সংগঠনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, বেনাপোল বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৫৯ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু এখানে সবসময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ টন। জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকে। খোলা জায়গায় পড়ে থেকে মূল্যবান পণ্যসামগ্রী নষ্ট হয়।

সরকার বর্তমানে এ বন্দর থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা অবকাঠামোগত সুবিধা পেলে তা দ্বিগুণ হবে বলে তিনি মনে করেন।

বন্দরের জায়গা সংকটের কথা স্বীকার করে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আবদুল জলিল বলেন, “এরই মধ্যে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়নে হাত দিয়েছি। নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও উন্নয়নকাজ চলছে।”

তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দরকে আরও উন্নত করতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন হয়েছে। কার্গো ভেহিকল টার্মিনাল হয়ে গেলে যানজট একেবারেই থাকবে না। ফলে পণ্য পরিবহন বাড়বে।

তবে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেনাপোল শুল্ক কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল শুল্কভবনের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, পণ্য খালাসে আগের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বেড়েছে কাস্টম হাউজে। শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন।

“বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য চালান কম আমদানি হওয়ায় রাজস্বে কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে আন্তরিক হয়ে কাজ করছি।”

অর্থবছরের শেষের কয় মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।