৬ মাস না যেতেই ৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ছেই। অর্থবছরের ছয় মাস না যেতেই ৯০০ কোটি (৯ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2019, 03:35 PM
Updated : 24 Dec 2019, 02:35 AM

চলতি বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের ১৯ দিনেই ১২২ কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।এই ধারা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরে রেমিটেন্স ২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে। আর তা হবে এক মাসের হিসাবে রেকর্ড।

এখন পর্যন্ত এক মাসে ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে বাংলাদেশ; গত মে মাসে।

আর রেমিটেন্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারায় রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কার পরও বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নমুখী। এই ‘বৈরি হাওয়ার’ মধ্যে একমাত্র রেমিটেন্সই আশার আলো ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

গত নভেম্বর মাসে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ (১.৫৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

আর চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিটেন্স এসেছে ৭৭১ কোটি (৭.৭১ বিলিয়ন) ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।

ফাইল ছবি

দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমালে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রেমিটেন্স আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ডিসেম্বর মাসের ১৯ দিনে ১২২ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এ নিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের পাঁচ মাস ১৯ দিনে (১ জুলাই থেকে ১৯ ডিসেম্বর) রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯৩ কোটি ৭৬ লাখ (৮.৯৪ বিলিয়ন) ডলার।

অক্টোবর মাসে ১৬৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।তার আগে সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছিলেন ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।অগাস্টে আসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

তার আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।প্রবাসীরা এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি ঔ ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন।

মদিনা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিলমাসিহ নামক স্থানে মরুভূমির মাঝে একটি কৃষিখামারে কাজ করছেন বাংলাদেশিরা।

বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ আশা করছেন চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সর পরিমাণ ২১ বিলিয়ন ড৪লার ছাড়িয়ে যাবে।

১৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন,  গত অর্থবছরে সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। এবার প্রথম ৫ মাসে সাড়ে ২২ শতাংশ বেশি এসেছে।

“এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে প্রত্যাশা করছি। আর সেক্ষেত্রে অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।”

বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত।

মদিনা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিলমাসিহ নামক স্থানে মরুভূমির মাঝে একটি কৃষিখামারে কাজ করছেন বাংলাদেশিরা।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একমাত্র রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির অন্য সব সূচকের অবস্থা এখন খারাপ। রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। রাজস্ব আদায় কমছে। মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী।চাপে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ।আমদানিও কমছে।বিনিয়োগে খরা কাটছে না।ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পাহাড়।শেয়ারবাজারে তো মন্দা লেগেই আছে।

“সে কারণেই বলা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই এখন সচল রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা।”

রিজার্ভ ফের ৩২.৪ বিলিয়ন ডলার

রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে উঠিছিল।এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল।

গত এক মাসে তা বেড়ে আবার সেই আগের অবস্থানে উঠেছে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়