টাকার মান কমাবে না সরকার: অর্থমন্ত্রী

অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানোর কোনো ‘সম্ভবনা নেই’ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2019, 03:30 PM
Updated : 18 Dec 2019, 03:30 PM

বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠেক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “সবাই চেয়েছিল যে আমাদের কারেন্সি ডিভ্যালুয়েশন করা হোক। তাদের যুক্তি ছিলে কারেন্সি ডিভ্যালুয়েশন হলে রপ্তানি বাণিজ্য থেকে শুরু করে রেমিটেন্স অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু আমরা বলেছি, অন্য যেসব দেশ কারেন্সি ডিভ্যালুয়েশন করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না।’

গত নভেম্বরের শেষে মুদ্রাবাজার হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে ওঠে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনেই (ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা) ডলারের দর উঠে যায় ৮৫ টাকায়। ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলার বিক্রি হয় ৮৭ টাকার বেশি দরে। খোলাবাজারে তা ছিল আরও বেশি।

বুধবার আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ৮৭ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। আর  খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেটে) ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সায়।

এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির স্বার্থে ডলারের বিনিময় হার আরও বাড়ানোর পক্ষে মত দেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

নভেম্বরের শেষে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৮ থেকে ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে।

“চীন, ভারত, ভিয়েতনামসহ প্রতিযোগী দেশগুলো তাদের রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের সুবিধা দিতে তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছে।  ডলার শক্তিশালী করা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই। অর্থনীতির স্বার্থেই এটা করতে হবে।”

তবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এটা বার বার বলা হয় কারেন্সি ডিভ্যালুয়েশন কেন করা হচ্ছে না? আমরা মনে করি টাকার মান কমালে আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। কারণ আমরা এত পরিমাণ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছি, এখন অবকাঠামোতে বিনিয়োগে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছি। কারেন্সি ডিভ্যালুয়েশন হলে এ খাতে বিনিয়োগ আসবে না।”

এর বদলে দেশীয় রপ্তানিমুখী শিল্পকে সহায়তা করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের স্পেসেফিক খাতে প্রণোদনা দেব। তাহলে ওই খাতটি বেগবান হবে। রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে আমরা তৈরি পোশাক খাতকে প্রণোদনা দিয়েছি। আরও দিতে হলে দেব।”

টাকার মান কমানোর আলোচনায় ‘ক্ষতি’ হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আজকেও একটি পত্রিকায় দেখলাম পুঁজিবাজার থেকে সব বিদেশিরা বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা ধারণা করছে, এখানে মুদ্রার মান কমানো হবে। কিন্তু আমাদের সরকারের তা করার কোনো পরিকল্পনা নেই। চলতে বাজেটে এটি ছিল না, আগামী বাজেটেও এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত থাকবে না।”

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হলে আমদানি খরচ বাড়বে।

“আমরা যতই টাকার মান কমাই না কেন, আমাদের আমদানির তুলনায় রপ্তানি বাড়বে না। তাহলে মান কমিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেন? যদি কোনো নির্দিষ্ট খাত যেমন প্লাস্টিক, সিরামিক এসব খাতে প্রণোদানা লাগে, তাহলে আমরা দেব।”

পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রতিদিন যে সূচক নিম্নমুখী হচ্ছে, এটা হল একটি রিউমার। একেকটা রিউমার আসে এটা বহু দিন চলে। আবার স্টেবল হয়, কয়দিন পর স্টেবল হবে জানি না।”