লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বাড়ছে

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ঘাটতি বাড়ছে বাংলাদেশের।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2019, 07:08 PM
Updated : 14 Dec 2019, 07:08 PM

জুলাই-অক্টোবর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অথচ অগাস্ট মাস শেষেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। সেপ্টেম্বর শেষে ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ঘাটতি ছিল ৭৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) তা বেড়ে হয়েছে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ঘাটতি ছিল ২০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রপ্তানি আয়ে ধস নামার কারণে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বাড়ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, গত দুই অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি নিয়ে বছর শেষ হয়েছিল। কিন্তু এবার অর্থবছর শুরু হয়েছিল ‘স্বস্তির’ মধ্য দিয়ে ২৪ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত নিয়ে। অগাস্ট পর্যন্ত সেই উদ্বৃত্ত ধরে রাখা গিয়েছিল।

“কিন্তু রপ্তানিতে বড় ধাক্কার কারণে সেটা আর ধরে রাখা যায়নি। গত দুই বারের মতো এবারও মনে হচ্ছে বড় ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কেননা, সহসা রপ্তানি আয় ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।”

“উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গত অর্থবছরে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্সে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতি থাকলেও সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে (ওভারওল ব্যালান্স) উদ্বৃত্ত ছিল। এবার ঘাটতি নিয়েই বছর শেষ করতে হবে বলে মনে হচ্ছে।”

জুলাই-অক্টোবর সময়ে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। জুলাই-অগাস্ট সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার।গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ঘাটতি ছিল ৪৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

তবে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-অক্টোবর সময়ে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ২২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরু করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।অগাস্ট শেষে উদ্বৃত্ত দাঁড়ায় ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

চলতি হিসাবের ভারসাম্য ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল আরও বেশি ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

এফডিআই বেড়েছে ৫.৩৬%

তবে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১৫৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশে। এই বছরের একই সময়ে এসেছে ১৬৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।

এ হিসাবে চার মাসে এফডিআই বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

এই চার মাসে বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছে ৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আগের বছরে একই মাসে এসেছিল ৮৪ কোটি ১০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়ে থাকে।

পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগে খরা

পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) প্রবাহের গতি গতবারের মতোই হতাশাজনক।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে মাত্র ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল আরও কম; ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

জুলাই-অক্টোবর সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ বাংলাদেশে এসেছে ১৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত বছরের এই চার মাসে এসেছিল ১৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।