কৃষি ও প্রাণসম্পদের উন্নয়নে দুই প্রকল্প উদ্বোধন

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতকে রক্ষায় বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় পৃথক দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 05:36 PM
Updated : 11 Dec 2019, 05:36 PM

বুধবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘কৃষিখাত সুরক্ষা’ এবং ‘লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্প দুটি উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, কৃষি প্রকল্পে ৪০৯ মিলিয়ন ডলার এবং লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে বিশ্ব ব্যাংক।

এই দুই প্রকল্পের জন্য বিশ্ব ব্যাংককে অভিনন্দন জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 

“এটা বাংলাদেশের কৃষিখাতের জন্য সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। ক্ষেত-কৃষিসহ প্রাণিসম্পদ খাতে এটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।”

সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কৃষির উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের গত তিন মেয়াদের শাসনামলে সেই বিষয়টির ওপরই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকেই খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ।”

তবে দেশে পোল্ট্রি ও ডেইরিসহ এ ধরনের কৃষিখাতগুলো এখনও বিপণনের সমস্যায় ভুগছে বলে জানান তিনি।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকার এখন কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে।  পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমাতে সারসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপাদানগুলোর ‘দাম কমিয়েছে’।

কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করতে বেসরকারি খাতগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি ডেনডেন চেন বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের কৃষি খাতের চলমান প্রবৃদ্ধির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।

“কৃষির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে সামনে রেখে এবং কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর ও কৃষিখাতের অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক যৌথভাবে ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট প্লান (সিএসএআইপি) বা জলবায়ু সহনশীল কৃষি বিনিয়োগ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।”

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ বছরে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছিল সর্বাগ্রে। কিন্তু সম্প্রতি তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা দেশটির সবচেয়ে বৃহৎ দুই শস্য আমন ও বোরোর আবাদকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সমুদ্রের পানির চাপ ধানের আবাদ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও মাটির লবণাক্ততা উপকূলীয় এলাকায় ৬২ শতাংশ কৃষিক্ষেত্রকে আক্রান্ত করেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা উপকূলের এক চতুর্থাংশ জমি নষ্ট করে দিতে পারে।

তবে এই দুই প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখার পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, মাংস ও প্রোটিনের যোগান দেওয়া প্রাণি ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া হল।

প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খসরু বলেন, “দেশের ৭০ ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। এর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ সরাসরি কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত।

“তাই দেশের বড় এই জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখেই সরকার কৃষিখাতের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।“

কৃষির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “আগে ডিসেম্বর মাসে যে পরিমাণ শীত পড়ত এখন তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে শীতকালীন শাক-সবজির ফলন কমে যাচ্ছে। একইভাবে গরমের মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে পোল্ট্রি ও গবাদি পশুর ক্ষতি হচ্ছে।”

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতেও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে আশরাফ আলী খসরু বলেন, “সেই ঝুঁকি বিবেচনায় সরকার ক্লাইমেট স্মার্ট প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।“

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইসুল ইসলাম মন্ডল, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।