রাজস্ব আদায়: চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে এনবিআর

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৫ শতাংশ বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে আছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2019, 07:47 PM
Updated : 8 Dec 2019, 07:54 PM

জুলাই-অক্টোবর সময়ে রাজস্ব বাবদ মোট ৬৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আহরণ হয়েছিল ৬২ হাজার কোটি টাকা।

‘জাতীয় ভ্যাট দিবস’ ও ‘জাতীয় ভ্যাট সপ্তাহ’ সামনে রেখে রোববার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজস্ব আদায়ের এই চিত্র তুলে ধরেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, “অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) রাজস্ব আহরণে প্রায় ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাসে গিয়ে আমাদের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে গেছে। আবার অক্টোবর মাসে বেড়েছে। এই প্রবণতা আমরা ধরে রাখতে পারব বলে আমি মনে করি।”

চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে। এছাড়া আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমদানি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গেছে। এখাতে কিছুটা মন্দাভাব হওয়াতে শুল্ক আহরণ কিছুটা কমে পুঞ্জিভূত প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। তবে সারা বছর একই প্রবণতা থাকবে এটা আমরা প্রত্যাশা করি না। নভেম্বরে এটা বাড়বে।”

তবে এই সময়ে ভ্যাট আহরণে প্রবৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ভ্যাট আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। আয়কর খাতের প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “আমার মনে হয় চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে আয়করে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশে উন্নীত হবে।”

এ পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার ব্যবসায়ীর ভ্যাট নিবন্ধন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বার্ষিক প্রবণতা অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ে। এ সময়ে লার্জ ট্যাক্স ইউনিটের (এলটিইউ) রাজস্বও বেশি পাওয়া যায়।”

গণমাধ্যমে কর্মীদের উদ্দেশে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমার মনে হয় আপনারা দেশবাসীকে একেবারে চূড়ায় ওঠতে না পারলেও আশার বাণী শোনাতে পারেন।”

ভ্যাট সপ্তাহের কর্মসূচি

আগামী ১০ ডিসেম্বর ‘জাতীয় ভ্যাট দিবস’ এবং ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ‘জাতীয় ভ্যাট সপ্তাহ’ পালন করবে সরকার।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট দিতে করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং করদাতাদের সঙ্গে ভ্যাট কর্মকর্তাগণের ‘সুসম্পর্ক স্থাপনের’ মাধ্যমে করদাতা-বান্ধব পরিবশ সৃষ্টি করে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ভ্যাট সপ্তাহ পালনের প্রধান উদ্দেশ্য।

১০ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবন প্রাঙ্গনে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহের উদ্বোধন করা হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

এ কর্মসূচি সামনে রেখে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি মতবিনিময় সভা এবং সর্বোচ্চ ভ্যাটদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।