সেবা রপ্তানিতেও ধাক্কা

পণ্য রপ্তানির মতো সেবা রপ্তানিও কমছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2019, 05:05 PM
Updated : 5 Dec 2019, 05:05 PM

সুখবর দিয়ে গত অর্থবছর শেষ করলেও চলতি অর্থবছরের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে সেবা রপ্তানি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বৃহস্পতিবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে,তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্ব) সেবা রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১৫০ কোটি ডলার আয় করেছে।

রপ্তানির এই পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ২৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এই তিন মাসে সেবা রপ্তানি থেকে  ২১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাত থেকে আয় হয়েছিল ১৫২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

পণ্য রপ্তানির মতো সেবা রপ্তানিতেও বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে সেবা রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৬৩৫ কোটি (৬.৩৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে।

ওই অংক ছিল ২০১ ৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছিল প্রায় ২৭ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় সেবা খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

“বাংলাদেশের সেবা খাতের রপ্তানি সম্প্রতি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ সুবিধা প্রাপ্তির কারণে ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।”

কিন্তু এরপরও সেবা খাতের রপ্তানিতে কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ প্রসঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পণ্য রপ্তানির সঙ্গে সেবা রপ্তানি সরাসরি সম্পর্কিত। পণ্য রপ্তানি কমলে সেবা রপ্তানি কমবে- এটাই স্বাভাবিক।”

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সেবা খাতের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ১৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে। অর্থাৎ মোট আয়ের ৯৮ শতাংশই এসেছে সরাসরি সেবা রপ্তানি করে।

বাকিটা দেশের বন্দরগুলোতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর কেনা পণ্য ও সেবা এবং মার্চেন্টিংয়ের অধীনে পণ্য বিক্রির আয়।

কোনো অনাবাসীর কাছ থেকে পণ্য কিনে একই পণ্য কোনো অনাবাসীর কাছে বিক্রি করাকে মার্চেন্টিং বলে। এই প্রক্রিয়ায় মোট বিক্রি থেকে মোট ক্রয় বাদ দিয়ে নিট মার্চেন্টিং রপ্তানি আয় হিসাব করা হয়।

দেশের স্থল, সমুদ্র বা বিমান বন্দরে বিদেশি পরিবহনগুলো সেসব পণ্য ও সেবা- যেমন জ্বালানি তেল ও মেরামত সেবা-কিনে থাকে সেগুলোকে সেবা খাতের আওতায় ধরা হয়েছে।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সেবা খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে সরকারি পণ্য ও সেবা রপ্তানি থেকে। এ উপখাত থেকে এসেছে ৬৭ কোটি ডলার।

অন্য উপখাতগুলোর মধ্যে অন্যান্য ব্যবসায় সেবা থেকে এসেছে ২১ কোটি ৮০  লাখ ডলার। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।

বিভিন্ন ধরণের পরিবহন সেবা (সমুদ্র, বিমান, রেল এবং সড়ক) থেকে ১৫ কোটি ১ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

আর্থিক সেবা খাত থেকে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং ভ্রমণ সেবা উপখাত থেকে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

নির্মাণ সেবা থেকে এসেছে ৭ কোটি ৭২ লাখ ডলার।

ইপিবি’র তথ্য ঘেটে দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের মোট রপ্তানি আয়ের ৯৮ শতাংশই এসেছে সরাসরি সেবা রপ্তানি থেকে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ চার হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।

এই অংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। আর আগের অর্থবছরের চেয়ে আয় বেশি এসেছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

পণ্য ও সেবা খাত মিলে গত অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৭ কোটি ৩৫ লাখ (৪৬.৮৭ বিলিয়ন) ডলার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ধরা ছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি (৩৯ বিলিয়ন) ডলার।আর সেবা রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার।

দুইটা মিলিয়ে মোট লক্ষ্য ছিল ৪ হাজার ৪০০ কোটি (৪৪ বিলিয়ন) ডলার।

২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাত মিলিয়ে মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য হচ্ছে ৪৫ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। আর সেবা রপ্তানি থেকে ৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।