বিতরণ ব্যয় ৪১ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব ডিপিডিসির

বিদ্যমান বিতরণ ব্যয় ২০২০ সালের পঞ্জিকা বছরে ৪১ পয়সা বাড়িয়ে (৪৯ শতাংশ) এক টাকা ২৪ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2019, 01:22 PM
Updated : 2 Dec 2019, 05:01 PM

তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি দল বলছে কোম্পানিটির বর্তমান বিতরণ ব্যয় ৮৩ পয়সা থেকে মাত্র চার পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ পয়সা করলেই চলবে।

সোমবার কারওয়ান বাজার টিসিবি অডিটরিয়ামে গণশুনানিতে বিদ্যুতের মূল্যহার পরিবর্তন নিয়ে নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। ওই প্রস্তাবের ওপর বিইআরসির মূল্যয়নের পাশাপাশি ভোক্তা প্রতিনিধিদের যুক্তিতর্ক চলে সেখানে।

বিতরণ ব্যয় বাড়ানোর কারণ হিসেবে অবচয়, সম্পদের পরিবৃদ্ধি, জনবল বৃদ্ধি, পরিচালন ও রক্ষাণাবেক্ষণ এবং ফিন্যান্সিয়াল ব্যয় বৃদ্ধিকে উল্লেখ করেছে ডিপিডিসি।

বিইআরসির নিরীক্ষায় বলা হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে ডিপিডিসির প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তিতে বিতরণ ব্যয় প্রতি ইউনিটে এক টাকা ২৪ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই ব্যয় ছিল এক টাকা দুই পয়সা।

বিইআরসির কারিগরি কমিটির বিবেচনা হচ্ছে, রেট বেইজের ওপর গড়ে তিন দশমিক ৯৬ শতাংশ রিটার্ন বিবেচনায় ২০২০ পঞ্জিকা বছরে ডিপিডিসির নিট বিতরণ রাজস্ব চাহিদা প্রতি ইউনিটে শূন্য দশমিক ৮৭ পয়সা। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বরের দেওয়া মূল্যহার আদেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিতরণ ব্যয় ছিল প্রতি ইউনিটে শূন্য দশমিক ৮৩ পয়সা। বিদ্যমান পাইকারি ও সঞ্চালন মূল্যহারের ভিত্তিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনার্জি রেট ছিল ছয় টাকা ৬৩ পয়সা।

ডিপিডিসির ভোক্তা নিরাপত্তা খাতের ৪,৮৩২ মিলিয়ন টাকা ও এর মুনাফার পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করতে ডিপিডিসিকে নির্দেশ দিয়েছে বিইআরসি।

ডিপিডিসির উপস্থাপনায় দেখানো হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাদের সিস্টেম লসের টার্গেট আট দশমিক এক শতাংশের বিপরীতে সাত দশমিক ২৯ শতাংশ অর্জন করায় ৬১ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতায় বলা হয়, ডিপিডিসির লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নতুন নতুন অবকাঠামো উন্নয়ন, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ, নতুন সাব স্টেশন নির্মাণ ও পুরনো সাব স্টেশনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের মূল্য বেড়েছে। তাই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় কিছুটা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণ ও সরকার থেকে নেওয়া ঋণের পরিমান বাড়ায় ফিন্যান্সিং চার্জের পরিমাণ বাড়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে থাকায় নতুন কর্মচারী নিয়োগ এবং নতুন নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণের কারণে অপারেশন কস্ট বাড়বে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।

ডিপিডিসির প্রস্তাবে বলা হয়, ২০২০ পঞ্জিকা বছরের জন্য রিটার্ন অন রেট বেজ বিবেচনায় বর্তমান খুচরা মূল্য সমন্বয় করে ৪২৭ দশমিক ৭৫৯ কোটি টাকা রাজস্ব চাহিদা পূরণ করা প্রয়োজন। বর্তমানে প্রিপেইড মিটারে এক শতাংশ হারে রিবেট দেওয়ায় সাত দশমিক ২২ কোটি টাকা আয় কম হচ্ছে। তাই এই হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম ডিপিডিসির শুনানিতে বলেন, “যে অবচয়ের কারণে খচর বাড়ছে সেটা অনেকাংশে মিটারিং সিস্টেমের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি মিটারের দাম নিয়ে বিইআরসিকে নজর দিতে। এখন ডাবল লাইনের যে সিস্টেম চালু করা হচ্ছে এটাও খরচ বৃদ্ধির কারণ। ডাবল লাইনের পরেও মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।”

সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, মোবাইল ফোন গ্রাহক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদসহ বেশ কয়েকজন ভোক্তা প্রতিনিধি শুনানিতে বক্তব্য দেন।

ইউনিট প্রতি ১০ পয়সা মুনাফা ডেসকোর

বিকালে শুনানির দ্বিতীয় পর্বে ঢাকার আরেক বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেক্ট্রেক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড ডেসকো তাদের আবেদনে জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ডেসকোর ইউনিট প্রতি বিতরণ ব্যয় ছিল এক টাকা ১৫ পয়সা যা ২০২০ পঞ্জিকা বছরে এক টাকা ৩৯ পয়সা হবে।

তবে বিইআরসির কারিগরি কমিটির পর্যালোচনা অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই কোম্পানির জন্য বিতরণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ইউনিট প্রতি ৭৪ পয়সা। আর ২০২০ সালে ডেসকোর নিট বিতরণ রাজস্ব চাহিদা হবে ৮১ পয়সা। অর্থাৎ বাড়াতে হবে ৭ পয়সা। কিন্তু তারা বিতরণ ব্যয় ৬৫ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডেসকো ইউনিট প্রতি ১০ পয়সা মুনাফা করেছে। সেই মুনাফার টাকা শেয়ার বাজারে তাদের অংশীদারদের মাঝে বিতরণ করেছে। যাতে বিদ্যুতের সাধারণ ভোক্তাদের কোনো স্বার্থ নেই।

বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ ও মাহমুদউল হক ভূঁইয়া শুনানি নেন।