বিদ্যুতের দাম বাড়াতে শুরু হচ্ছে ‘গণশুনানি’

এ বছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যাতে পাইকারি, খুচরা ও সঞ্চালন পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি নিচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন- বিইআরসি।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2019, 04:57 PM
Updated : 27 Nov 2019, 04:57 PM

বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে অবস্থিত টিসিবি ভবনে প্রথম দিনের শুনানিতে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার পরিবর্তন ও সঞ্চালন মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবের ওপর শুনানি হবে।

আগামী বছর প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা লোকসানের পূর্বাভাস দিয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) দ্বারস্থ হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আর পিজিসিবি চাওয়া চার বছর আগে নির্ধারণ করা তাদের সঞ্চালন চার্জ তিন ধাপেই বাড়ানো হোক।

বর্তমানে সঞ্চালন চার্জ ২৩০ কেভি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট শূন্য দশমিক ২৭৪৪ টাকা, ১৩২ কেভি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট সঞ্চালন চার্জ শূন্য দশমিক ২৭৬৮ টাকা, ৩৩ কেভিতে প্রতি ইউনিট সঞ্চালন চার্জ শূন্য দশমিক ২৭৯১ টাকা রয়েছে।

নতুন করে আগামী জানুয়ারি থেকে সঞ্চালন চার্জ ২৩০ কেভি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট শূন্য দশমিক ৪১৬৬ টাকা, ১৩২ কেভিতে প্রতি ইউনিট সঞ্চালন চার্জ শূন্য দশমিক ৪২০২ টাকা, ৩৩ কেভিতে প্রতি ইউনিট সঞ্চালন চার্জ শূন্য দশমিক ৪২৩৭ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর চলতি বছরের শুরু থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে না। গ্যাসের সরবরাহ বাড়লে বর্তমানে চলমান ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থামিয়ে আরও নতুন নতুন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা যাবে।

গত মার্চ মাসে গণশুনানির পর ৩০ জুন সব পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ৩২.৮ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি।এতে আগের চেয়ে রান্নার গ্যাসের জন্য চুলাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রতি মাসে ২৩ শতাংশ এবং মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের ৩৮ শতাংশ খরচ বেড়েছে। যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে যারা সিএনজি ব্যবহার করেন, তাদের খরচ বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ে ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত।

প্রস্তাবনা সম্পর্কে পিডিবি চেয়ারম্যান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ২০২০ সালে আমাদের কী পরিমাণ লোকসানের মুখে পড়তে হবে, সেটাই তারা বিইআরসিকে জানিয়ে এর প্রতিকার চেয়েছেন।”

পিডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, “২০২০ সালে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় হবে ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এই ৮ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা লোকসান মেটাতে বিইআরসি কি দাম বাড়াবে না ভর্তুকি দিতে বলবে- সেদিকেই পিডিবি তাকিয়ে আছে।”

এদিকে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা আসছে ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও সাধারণ ভোক্তাদের পক্ষ থেকে। দীর্ঘদিন পর এই শুনানিতে উপস্থিত হয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগের বিরোধিতা করার ঘোষণা দিয়েছে রাজনীতির মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ‘গণবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক’।

“আমরা আগেও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছি, শুনানিতে গিয়েও যুক্তি দিয়ে এর বিরোধিতা করব। জনগণ বছর বছর এভাবে সেবা পণ্যের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ বাস্তবায়িত হতে দেবে না।”

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমরা তাদের প্রস্তাব দেখেছি। এটা সম্পূর্ণ অসার একটি প্রস্তাব। জনগণের পকেট কেটে নিজেদের ঝোলা ভারি করতে তারা এই উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগেও বিইআরসি শুনানির যুক্তিতর্ক উপেক্ষা করে সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছে। অন্য সময়ে মূল্য সমন্বয়ের কথা বললেও এবারও সরাসরি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবই করা হয়েছে। যার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।

“আমরা প্রস্তাবের ওপর প্রস্তুতি নিয়েছি। শুনানিতে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে আমাদের কথা তুলে ধরব। এর বাইরেও মাঠে রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে। আমি জনগণকে বলব, এসব কর্মসূচিতে গণহারে অংশ নিয়ে জনগণের পকেট কাটায় সরকারি এই উদ্যোগকে ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য। কারণ আমরা দেখেছি এই সরকার শক্তের ভক্ত, নরম কথার তোয়াক্কা করে না। বঙ্গবন্ধু বলতেন, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে তিনি সংখ্যায় একজন হলেও আমরা মেনে নেব। কিন্তু সরকার এখন আর ন্যায্য কথার ধার ধারে না, তারা বঙ্গবন্ধুর এই শিক্ষার মধ্যে আার নেই।”

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ভার সহ্য করার মতো সক্ষমতা পোশাক শিল্পের নেই। কারণ গত ১০ বছরে পোশাকের উৎপাদন খরচ ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়েছে। গত মাস থেকে আবার নতুন করে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি যোগ হয়েছে পোশাক খাতের উপর। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে নতুন কোনো বোঝা না চাপাতে অনুরোধ করছি। ইতোমধ্যেই আমরা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি।”