ধানের দাম বাড়ায় বেড়েছে চালের দাম: কৃষিমন্ত্রী

চালের দামের বৃদ্ধিতে কোনো কারসাজি নেই বলে মনে করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2019, 04:27 PM
Updated : 21 Nov 2019, 06:57 PM

তার মতে, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাবে বেড়েছে চালের দাম এবং এতে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন।

চালের সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই দাম বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দেন কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “গত মওসুমে ধানের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। ফলে ধানের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। ওই সময় কৃষক ধানের দাম পাচ্ছিল না বলে পত্র-পত্রিকা, নাগরিক সমাজের নেতা, রাজনৈতিক নেতারা সমালোচনা করেছিলেন। এমনকি সরকারে থেকে আমিও এনিয়ে কথা বলেছিলাম।

“এখন গত ৬/৭ দিন ধরে চালের দাম কেজিতে ৪/৫ টাকা বেড়েছে। ধানের দামও বেড়েছে প্রতি মনে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পত্রিকায় এনিয়েও লেখা হচ্ছে, ডেইলি স্টার পত্রিকায় শিরোনাম করেছে রাইস গেটস প্রিসিয়াস।”

কৃষিবিদ রাজ্জাক বলেন, “আমি এবিষয়ে কৃষকদের সঙ্গে ও মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। দীর্ঘদিন পর বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। একইভাবে চালের দামও বেড়েছে। খুব সম্ভবত ধানের দাম বৃদ্ধির একটা প্রভাব চালের দামে পড়েছে।”

সরকার এতদিন মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনলেও এবারই সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতেও কৃষকরা উপকৃত হবে বলে মনে করেন কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না। কারণ এই মওসুমে যেসব কৃষক ধান বিক্রি করবে, পরের মওসুমে তারা তালিকা থেকে বাদ যাবে।”

২০ নভেম্বর থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন ধান কেনা শুরু করেছে সরকার, যা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকার ধান কেনার ঘোষণা দেওয়ার পর চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করে চালের দাম।

২৬ টাকা কেজি হিসাবে প্রতিমণ ধানের দাম পড়ে ১০৪০ টাকা। যদিও আউশ মওসুমে ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায় ধান বিক্রি হয়েছিল।

চলতি মাসের শুরুতে খোলা বাজারে ধানের দাম প্রতিমণ ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ৮৫০ টাকা বেড়েছে বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাব রাইস এজেন্সির পরিচালক নজরুল ইসলাম রনো জানিয়েছেন।

মিরপুর-১ নম্বর বাজারে চালের পাইকারি বিক্রেতা জননী রাইস এজেন্সির পরিচালক মহিউদ্দিন হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত এক সপ্তাহে রশিদ, মোজাম্মেল ও এরফান ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দাম বস্তায় (৫০ কেজি) একশ থেকে দেড়শ টাকা করে বেড়েছে।

“ভালো মানের মিনিকেটের বস্তা ২০০০ টাকা থেকে বেড়ে ২১৫০ টাকায় উঠেছে। ১৮৫০ টাকা বস্তার মিনিকেটগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৯৫০ টাকায়।”

“ধানের দাম বাড়ার কারণে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছেন বলে শুনেছি,” বলেন এই পাইকারি বিক্রেতা।

রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক মেলার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।

সেখানে একই সঙ্গে সপ্তম বাপা ফুডপ্রো, নবম এগ্রো বাংলাদেশ এক্সপো এবং ষষ্ঠ রাইস অ্যান্ড গ্রেইনটেক এক্সপো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে।

মেলায় বিভিন্ন দেশের তিন শতাধিক কোম্পানি অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে কেবল ভারত থেকে অংশ নিয়েছে সর্বোচ্চ ৬৫টি প্রতিষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি আহসান খান চৌধুরী বলেন, কয়েক বছর আগে এগ্রো প্রসেসিং খাত বড় ধরনের বিপদের মধ্যে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান কৃষিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই পরিস্থতির উত্তরণ ঘটেছে।

অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সারাবিশ্বের এগ্রোফুড রপ্তানির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে খাবারের মান। মান বজায় রাখতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করলে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবেনা। 

বাপার যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে ১৩ জন সদস্য নিয়ে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৩০০। যারা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বিশ্বের ১৪৪টি দেশের রপ্তানি করছে।

২০২১ সালে ১০০ কোটি ডলারের রপ্তানি

মেলার আয়োজকদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৭০ কোটি ডলার আয় করেছিল। ২০২১ সালের মধ্যে এই রপ্তানি ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

আহসান চৌধুরী বলেন, “আমরা আশাবাদী যে সময়ের সাথে সাথে এই মেলার পরিসর ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রসার এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাথে দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচয় করানো এই মেলার অন্যতম লক্ষ্য।”

মেলায় প্রদর্শনী ছাড়াও কারিগরি সেশন থাকবে। যেখানে দেশ-বিদেশের এই খাতের সাথে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও অংশগ্রহণকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ম্যাচিং সেশনের ব্যবস্থাও থাকবে।

মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ১৫টি দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।