কর হার কমাবই: অর্থমন্ত্রী

দেশের বর্তমান কর হার কমাতে দ্রুত একটি কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2019, 06:39 PM
Updated : 14 Nov 2019, 06:39 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে ২০১৮-২০১৯ করবর্ষে সর্বোচ্চ ও দীর্ঘমেয়াদে করদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে একথা জানান তিনি।

মুস্তফা কামাল বলেন, “আমি এই ওয়াদা রাখব । আমি ট্যাক্স রেট কমাবই কমাব, কিন্তু করের পরিমাণ ঠিক রাখব।”

কর থেকে রাজস্ব আয় না কমিয়ে করদাতাদের চাপ কিভাবে কমাবেন, তার পথও খুঁজছেন তিনি।

“আমি খুব দ্রুতই একটি কমিটি করে দেব। তারা আমার জন্য ইকুইলিব্রিয়াম খুঁজে বের করে দিবে। অর্থনৈতিক গবেষণার যত তথ্য এবং সূত্র আছে, সেগুলো ব্যবহার করে আমরা বের করব করের হার কত কমালে আমার তিন লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা আহরণ করতে পারব।”

করদাতাদের ‘দেশপ্রেমিক’ ও ‘ভালো মানুষ’ অভিহিত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আপনারা দেশপ্রেম থেকে কর দেবেন এবং এই বিশ্বাস নিয়ে কর দেবেন যে সরকার এই টাকাগুলো ভালো কাজে ব্যয় করে।”

২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ হওয়ার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এটা বিশ্বের কোনো দেশের তুলনায় কম নয়।

করদাতাদের উদ্দেশে মুস্তফা কামাল বলেন, পৃথিবীর বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশকে চেনে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে, এর এই সুনামের অংশীদার করদাতারাও।

অর্থমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে বলেন, “তারা বলেছে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এশিয়ার পঞ্চম টাইগার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং ব্লুমবার্গ, তিনটির সমন্বয়ে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন পৃথিবীতে ৩০ নম্বর স্থানে অবস্থান করছে, ২০২৮ সালে আমরা ২৭ নম্বর অবস্থানে চলে আসব।

“অস্ট্রেলিয়ার একটি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় তারা বলেছে, ২০৩০ সালে আমরা তাইওয়ানের উপরে চলে যাব। তখন আমাদের অর্থনীতির আকার হবে ওয়ান ট্রিলিয়ন ডলারের মতো।”

নিজেরা কর দেওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও কর দানে উদ্বুদ্ধ করতে করদাতাদের প্রতি আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী।

কর দিতে জনগণকে অভয় দিয়ে তিনি বলেন, “যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আপনারা দেখছেন, এগুলো আস্তে আস্তে সব কেটে যাবে। আমি কথা দিচ্ছি, এই সমস্যা থাকবে না। আমাদের এনবিআরের চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন যে উনি কোনো সমস্যা হলে দেখবেন। উনার সাথে আমিও আছি। যদি আপনারা কোনো সমস্যায় পড়েন, আমার কাছে আসবেন। আপনার নির্বিঘ্নে কর দেন।”

করদাতাদের উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধকরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ও দীর্ঘমেয়াদে কর প্রদানকারীদের সম্মাননা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

করদাতাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ‘রক্তসঞ্চালন’ অভিহিত করে তিনি বলেন, “সবাই প্রতিযোগিতা করে কর দেন, কে কার চেয়ে বেশি কর দিতে পারেন।”

এ সময় তিনি সর্বোচ্চ করদাতা হাজী মোহাম্মদ মিয়া কাউছ মিয়াকে মঞ্চে ডেকে আনেন। কাউছ মিয়াকে দেখিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সবাই যেন তার মত নিষ্ঠার সঙ্গে কর দেয়।

২০১৮-২০১৯ করবর্ষে ব্যক্তি কোম্পানি ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১৪১ জনকে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হয়। আর জেলাভিত্তিক সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী হিসেবে ৩৩৪ জনকে এবং দীর্ঘমেয়াদে আয়কর প্রদানকারী ১৪৭ জনকেসহ মোট ৫২১ জনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান সব করদাতাকে ধন্যবাদ জানান।