ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ হবে এডিবির অর্থায়নে

চীনা কোম্পানি বাদ পড়ার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটিতে অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

জাফর আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2019, 06:28 PM
Updated : 13 Nov 2019, 06:28 PM
সরকারের আবেদনে নীতিগতভাবে অর্থায়নে সম্মতি দিয়েছে সংস্থাটি। তারা এখন এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণে সমীক্ষা পরিচালনা করছে।

ইআরডি সচিব মো. মনোয়ার আহমেদ বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য আমরা এডিবি‘র কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। সম্প্রতি তারা আমাদের এ প্রকল্প অর্থায়নের বিষয়ে নীতিগত সম্মতির বিষয়টি জানিয়েছে।”

তবে প্রকল্পটির জন্য এডিবি কত টাকার ঋণ সহায়তা দেবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।

“কারণ প্রথমে এ প্রকল্পটির এক পাশে সার্ভিস লেন হওয়ার কথা ছিল। এখন সড়কটির উভয় পাশেই ধীর গতির গাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা সার্ভিস লেন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নতুন করে প্রকল্পটি সমীক্ষা করা হচ্ছে। ওই সমীক্ষার পর ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যাবে,” বলেন মনোয়ার।

ব্যয়ের অঙ্ক নির্ধারিত হওয়ার পরই এডিবি‘র কাছ থেকে প্রকল্পের মোট ব্যয়ের কত শতাংশ নেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করা হবে।

সম্প্রতি এডিবির প্রধান কার্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। ওই প্রতিনিধি দল ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি নীতিগত সম্মতি দেয়।

এখন এডিবির সঙ্গে ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে এডিবির সঙ্গে চুক্তি হতে পারে বলে আশা করছেন ইআরডি কর্মকর্তারা।

২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশে সফরের সময় চীনা অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নয়নসহ ২৭ প্রকল্পে অর্থায়নে দু‘দেশের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এরপর চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে এ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এরমধ্যে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তৎকালীন সচিব নজরুল ইসলামকে চায়না হারবার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর জন্য এক লাখ ডলার ঘুষ দেয়ার অভিযোগ আনেন। তিনি তখন এই চীনা কোম্পানিটিকে কালোতালিকাভুক্ত করার ঘোষণাও দেন।

পরে কালোতালিকাভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটিকে সীতাকুণ্ড থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প থেকেও বাদ দেওয়া হয়।

পরে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চীনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হওয়ার ২৭ প্রকল্পের তালিকা থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসগক নির্মাণ প্রকল্পটি বাদ দেওয়া হয়।

এদিকে এডিবির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য কত হবে, কতটি সেতু ও উড়াল সড়ক থাকবে সেবিষয়ে যাছাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এর ওপর ভিত্তি করে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয়হবে তা নির্ধারণ করা হবে। তখনই সিদ্ধান্ত হবে এডিবি এতে কত টাকা ঋণ দেবে।

২২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সোয়া চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৭০টি সেতু নির্মাণের কথা ছিল প্রকল্প প্রস্তাবে। এছাড়া চার হাজার ৩৫৮ মিটার দীর্ঘ চারটি উড়াল সড়কও নির্মাণের কথা ছিল।

উড়াল সড়কগুলো ভৈরব, সিলেটের গোয়ালা বাজার, তাজপুর ও দয়াময়ী বাজার এলাকায় নির্মাণের কথা। এছাড়া নরসিংদী, ভৈরব, ওলিপুর, লস্করপুর ও সিলেটে নির্মাণ করা হবে রেল ওভারপাস। মহাসড়কটি এশিয়ায়ন হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।

সংশ্লিষ্টারা জানান, ২০১৪ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-সিলেট চার লেইন প্রকল্পে সরকারের প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।