
উন্নয়নশীল দেশ হতে বাংলাদেশকে পাশে চায় নেপাল
সাজিদুল হক, কাঠমান্ডু থেকে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 13 Nov 2019 06:36 PM BdST Updated: 13 Nov 2019 07:12 PM BdST
বাংলাদেশের উন্নয়নের পথরেখা ধরে এগোতে চায় প্রতিবেশী দেশ নেপাল; সেজন্য চাইছে বাংলাদেশের সহযোগিতা।
বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে তারা বাংলাদেশের সহযোগিতা চাচ্ছেন।
নেপাল সফররত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে হোটেলে এসে দেখা করেন কে পি শর্মা অলি। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তাদের বৈঠক চলে।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে। এজন্য তিনি বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান।
“নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে নেপাল সকল ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই লক্ষ্যে নেপাল বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়।”
প্রেস সচিব বলেন, “নেপালর আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘সমৃদ্ধ নেপাল, সুখী নেপালি’ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সার্বিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহের কথা জানান নেপালের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং নেপাল বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে।
জল বিদ্যুৎ খাতে নেপালে বাংলাদেশের বিনিয়োগকে প্রত্যাশা করে কে পি শর্মা বলেন, এ খাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করতে পারে, এতে দু’দেশই উপকৃত হবে।
বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার সিদ্ধান্তের জন্য তিনি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলেও বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তা কমাতে অলি বাংলাদেশের সহযোগিতা চান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল হামিদ বলেন, “বাণিজ্য বৈষম্য দূরীকরণে শূল্ক ও কোটাসহ অন্যান্য যেসব বাধা আছে তা দূর করা সম্ভব। বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। নেপালের উৎপাদনকারীরা তাদের পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করলে বাণিজ্য বৈষম্য কমে আসবে।”
বাংলাদেশের মোংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহার করে নেপাল তাদের বাণিজ্য বাড়াতে পারে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করবে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে নেপালের বিরোধীদলীয় নেতা ও নেপালি কংগ্রেস পার্টির প্রেসিডেন্ট শের বাহাদুর দেউবা
বাংলাদেশ নেপাল থেকে জল বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহী উল্লেখ করে এলক্ষ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন আবদুল হামিদ।
তিনি এসময় আরও বলেন, দু’দেশের কানেকটিভিটি বাড়াতে উভয় দেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করলে দু দেশই উপকৃত হবে।
রাষ্ট্রপতি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রতি নৈতিক সমর্থনের জন্য নেপালের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
নেপালের লুম্বিনিতে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থানে নেপালের মাস্টারপ্ল্যানে বাংলাদেশের জন্য একটি প্লট বরাদ্দ রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবদুল হামিদ বলেন, এর ফলে দু’দেশের বৌদ্ধ ধর্মীয় মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনে নেপালের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল যোগ দেবে বলে আশা করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, মানবিক কারণে বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে। তারা সময়মতো ফেরত যেতে না পারলে শুধু বাংলাদেশ নয় এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। তিনি এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে নেপালের জোরালো সমর্থন আশা করেন।
এ প্রেক্ষাপটে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী একটি বড় সমস্যা। এর আশু সমাধানে তার দেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে নেপাল ‘সিরিজ ডায়ালোগ’ আয়োজন করবে জানিয়ে কে পি শর্মা এ বিষয়ে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আশা করেন।
পরে নেপালের ভাইস প্রেসিডেন্ট নন্দ বাহাদুর পুন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের সময় তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেল দুর্ঘটনায় হতাহাতের ঘটনায় দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে নেপালের বিরোধীদলীয় নেতা ও নেপালি কংগ্রেস পার্টির প্রেসিডেন্ট শের বাহাদুর দেউবা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের সময় তারা দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সাক্ষাতের সময় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম শামীম উজ জামান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
সর্বাধিক পঠিত
- মেসির হ্যাটট্রিকে শীর্ষে ফিরল বার্সেলোনা
- এসএ গেমস: শ্রীলঙ্কার কাছে পাত্তাই পেল না সাইফ-আফিফরা
- এসএ গেমস: রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে বাংলাদেশের মেয়েদের সোনা জয়
- ইন্টারনেট থেকে মিথিলা-ফাহমির ছবি সরানোর নির্দেশ
- কনসার্ট দিয়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু বিপিএল
- পর্দা উঠল বঙ্গবন্ধু বিপিএলের
- রুম্পা হত্যামামলায় বন্ধু সৈকত রিমান্ডে
- সালমান-ক্যাটরিনা ঢাকার মঞ্চে উঠবেন রাতে
- শক্তির জায়গা অনুযায়ী উদ্ভাবনী শট: নিক্সন
- রুম্পার বন্ধু সৈকত আটক