বিশেষ সুবিধা নেওয়া খেলাপিদের নতুন ঋণ নয়

সরকারের দেওয়া বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আর কোনো আবেদন গ্রহন করা হবে না। যারা ইতোমধ্যে সুবিধা নিয়েছেন তারা নতুন কোন ঋণ পাবেন না।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2019, 06:19 PM
Updated : 23 Oct 2019, 06:38 PM

তবে যারা ২০ অক্টোবরের মধ্যে আবেদন করেছেন তাদের কার্যক্রম ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।

হাই কোর্টের আদেশের পর বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত যে সার্কুলার জারি করেছে তাতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অনেক সমালোচনার মধ্যেই গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করে।

সেখানে তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। ওই সময়ের পর এ সুবিধা আর পাওয়া যাবে না বলে সার্কুলারে জানানো হয়েছিল।

ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিতে চার দফায় সময় বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৬ মে জারি করা নির্দেশনায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে খেলাপিদের দাবির মুখে সময় বাড়ানো হয় ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

পরে আবার সময় বাড়িয়ে করা হয় ২০ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ এক মাস সময় বাড়িয়ে নতুন সময় নির্ধারণ করা হয় ২০ অক্টোবর।

সময় বাড়ানো হলেও সার্কুলার বা নির্দেশনার অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত রাখা হয়।

সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো বুধবারের নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে সর্বশেষ সার্কুলারে ঋণ খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করার সময় ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

একই দিন (২০ অক্টোবর) হাই কোর্ট ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা সংক্রান্ত সার্কুলারের কার্যকারিতা আরও এক মাস অথবা রিট পিটিশন নিস্পত্তির তারিখ (যেটি আগে আসবে) পর্যন্ত বৃদ্ধি করার আদেশ প্রদান করেছেন।

ফাইল ছবি

“এ অবস্থায় হাইকোর্টের প্রদত্ত আদেশের আলোকে ইতোপূর্বে গৃহীত আবেদনসমূহের বিষয়ে ১৯ নভেম্বর অথবা রিট পিটিশন নিষ্পত্তির তারিখ (যেটি আগে আসবে) এর মধ্যে আগের সার্কুলার মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহন করা যাবে। তবে ২০ অক্টোবর অতিক্রান্ত হওয়ায় নতুন করে আর কোন আবেদনপত্র গ্রহন করা যাবে না।”

“একইসঙ্গে প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারের আওতায় পুন:তফসিল/এককালীন এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ খেলাপির অনুকুলে কোন নতুন ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে না।”

ব্যাংক খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, সুদ মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত ও সুপারিশ প্রনয়নে কমিশন গঠন করতে গত ২৩ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট ৫ সচিবসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছিল মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

এরপর সংগঠনটির পক্ষে মনজিল মোরসেদ হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি ৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে রুলসহ আদেশ দেয় বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্টে বেঞ্চ।

আদেশে গত ২০ বছরে এক কোটি টাকার উপরে ঋণ খেলাপি, ঋণের সুদ মওকুফ, অর্থপাচার ও অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন চায় আদালত।

কয়েক দফা সময় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপি বা অর্থপাচারকারীদের তালিকা আদালতে দাখিল না করলেও গত ১৬ মে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করে।

রিট আবেদনকারী পক্ষও সম্পূরক আবেদন করলে তা নিয়ে আইনি লড়াই চলতে থাকে।

বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ২৩ জুলাই ওই সার্কুলার নিয়ে রুল জারি করে।

দীর্ঘ অবকাশের পর গত ১৩ অক্টোবর থেকে সে রুলের শুনানি শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০ অক্টোবর ঐ আদেশ দিয়েছে আদালত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকগুলো ৫ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) পুনঃতফসিলের অংক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা।

অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে তিনগুণের বেশি খেলাপি ঋণ নিয়মিত হয়েছে।

২০১৯ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৬২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। রাইট অফ বা অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ যোগ করা হলে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে।