বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক পাঠাতে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যখন শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে, তখন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে থাকা শ্রমিকদের দক্ষতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ারও সময়ও এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2019, 12:32 PM
Updated : 22 Oct 2019, 12:32 PM

মঙ্গলবার রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ‘মানব অভিবাসনে জেন্ডার-সংবেদনশীল টেকসই প্রক্রিয়ার উপর ত্রিপক্ষীয় আলোচনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শ্রম বাজার বিস্তৃতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকার বিষয়েও আলোকপাত করেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মো. জুলহাস বলেন, “আরব আমিরাত, আবুধাবির আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে আমরা বাজার বিস্তৃতির কথা বলছি। আমরা সেখানে দক্ষ শ্রমিকও পাঠাব বলছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে শ্রমিক পাঠাতে গেলে আমাদের শ্রমিকদের দক্ষতারও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের সময় এসেছে।

“৮ লাখেরও বেশি শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রয়েছে। তারা অনেকে দারুণ সব অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন। তবে তাদের কাজ ও দক্ষতার কোনো স্বীকৃতি আসেনি। প্রায়োর লার্নিং ইস্যুতে তাদের দক্ষতার প্রমাণও তো চাই।”

শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করে আসা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে ‘কারিগরি সহায়তা’ নিয়ে এগিয়ে আসার করতে অনুরোধ করেন আইএলও- এর চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর লেতিতিয়া উইবেল রবার্টস।

তিনি বলেন, “শ্রমিকদের দক্ষতার স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশ যখন লড়বে, তখন কারিগরি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে। সরকার যখন এর নীতিমালার খসড়া করবে, দেনাদরবার করবে, তখন তাদের সহযোগিতা করতে হবে।”

ইউএন-উইমেন এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সুকু ইশিকাওয়া বলেন, বাংলাদেশের যে নারীরা আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করছেন, তাদের জন্য নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি।

“নারী শ্রমিকের অভিবাসন ইস্যুটিকে মূল্যই দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ, তাদের মানসিক সমস্যার সমাধানে অগ্রণী হওয়ার অনেকগুলো বিষয় আছে। এগুলো আলোচনায় আসা উচিৎ।”

সাম্প্রতিককালে প্রতারণা, হয়রানী, কঠোর ও অমানবিক কাজের পরিবেশের সম্মুখীন হয়ে বহু বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে পশ্চিম ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তির অগ্রগতি ও শিল্পায়নে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা বাড়ায় বিশ্বে অভিবাসী কর্মীদের কাজের বাজারও সাম্প্রতিক সময়ে বদলে গেছে।

অথচ যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাবের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে অভিবাসনের হার লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়েছে।

আগামী ১৮ নভেম্বর একুয়েডরের কুইটো শহরে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিৎ- সে বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়।

এবারের জিএফএমডি সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ‘মানব অভিবাসনের টেকসই পদ্ধতি: অধিকার সংরক্ষণ, রাষ্ট্রীয় সংস্থা শক্তিশালীকরণ, অংশীদারিত্ব এবং যৌথ পদক্ষেপের মাধ্যমে উন্নয়নের অগ্রগতি’।

এই প্রাক-জিএফএমডি আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অভিবাসন পরিস্থিতি ও জিএফএমডি-২০১৯ এ জেন্ডার সংবেদনশীলতা ত্বরান্বিত করতে আলোচনা হয়। 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘের মাইগ্রেশন নেটওয়ার্ক এবং অভিবাসনের বৈশ্বিক অঙ্গীকারে নাগরিক সমাজের (সিজিসিএম) যৌথ উদ্যোগে এ সভায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিব মো. সেলিম রেজা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রকাশ প্রকল্পের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইন্সটিটিউট অব ইনফরর্মেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) এবং বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র (বিএনএসকে)।