বৈষম্য দূর না হলে সমাজ এগোবে না: খলীকুজ্জমান

দারিদ্র দূরীকরণে বৈষম্য দূর করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সভাপতি অধ্যাপক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2019, 04:44 PM
Updated : 14 Oct 2019, 07:23 PM

সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের যৌথ উদ্যোগে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অবস্থান: নতুন নীতি কাঠামোর প্রস্তাবনা’ শীর্ষক বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

খলীকুজ্জমান বলেন, “দেশ থেকে কার্যকরভাবে দারিদ্র্য দূর করতে হলে মানুষের বহুমাত্রিক চাহিদার ভিত্তিতে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়।

“আমরা এখন পিকেএসএফেও প্রকল্প গ্রহণ বাদ দিয়েছি। দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।”

খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাসস্থান- এই চারটি মৌলিক চাহিদা মাথায় রেখে কর্মসূচি গ্রহণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

পিকেএসএফ সভাপতি বলেন, “সরকার পরিচালিত ভিজিডি, ভিজিএফ, বিধবা এবং বয়স্কভাতাসহ নানা উদ্যোগে গরীব মানুষকে সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু তা দিয়ে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হচ্ছে না।”

বৈষম্য দূর করতে না পারলে সমাজকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন,  “বৈষম্য দূর করার জন্য দেশে বিধিবিধান, আইন ও নীতি থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই।”

এ জন্য তিনি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যার যার অবস্থানে থেকে দারিদ্র্য বিমোচনে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ সভায় বলেন, “দুর্নীতিমুক্ত উপায়ে সরকারি ভাতা দরিদ্র মানুষের কাছে দুর্নীতি ছাড়া পৌঁছানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে বৈদ্যুতিক লেনদেন ব্যবস্থা। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সামান্য সমস্যা থাকলেও সবচেয়ে উত্তম উপায় এটি।”

দেশের দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছানো সরকারি ভাতার ক্ষেত্রে  ‘রাজনৈতিক বাণিজ্যিকীকরণ’ দূর করার ওপর জোর দেন তিনি।

মানুষকে দারিদ্র্য সীমার ওপরে তুলতে চাইলে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে অধ্যাপক আকাশ বলেন, “দারিদ্র্য দূরীকরণে সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে গ্রামীণ এলাকায় শিল্পায়ন করতে। অঞ্চল ভিত্তিক এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের উপযোগী কাজের শিল্পায়ন খুবই কার্যকর হতে পারে।”  

তিনি বলেন, আদিবাসীদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। কারণ দেশের সাধারণ দারিদ্র্যহার যেখানে ২১ শতাংশ, সেখানে আদিবাসীদের মধ্যে দারিদ্র্য হার ৬০ শতাংশ।

আদিবাসীঅধ্যুষিত এলাকায় দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিত করতে  আরও বেশি এনজিওর কাজ করা উচিৎ বলে মত দেন তিনি।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মাদ নুরুল কবির বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য এ অর্থবছরে বরাদ্দ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিবছরই বাড়ছে। ভাতার পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েশন স্কিম চালু হয়েছে। সকল প্রতিবন্ধী মানুষকেই এর আওতায় আনা হয়েছে।

“সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সহায়তা প্রদান কার্যক্রম ক্রমশ ডিজিটালাইজড হচ্ছে, ফলে দুর্নীতির আশংকা হ্রাস পাচ্ছে।”

অনুষ্ঠানে ’সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অবস্থান’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ এম শাহান।

তিনি বলেন, সরকারের সহায়তাগুলো ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পেরেছে অল্প সংখ্যক ব্যক্তি। ইতোমধ্যে উপকারভোগী নির্বাচন এবং সুবিধা বিতরণ নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়গুলো নতুন ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে।

“সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনগণের অংশগ্রহণ বেড়েছে, কিন্তু তা তাদের জীবনযাত্রায় যথেষ্ট পরিবর্তন আনতে পারেনি। এটি একটি ধাঁধার মত।

“ভিজিডির ক্ষেত্রে স্কোর-কার্ড পদ্ধতি চালু হলেও এতে দুর্নীতি রোধ করার জন্য এনজিওদের সাথে নিয়ে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।”

অধ্যাপক শাহান বলেন,  এনজিওগুলোর সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে চাওয়া প্রয়োজন, এর মাধ্যমেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ তাদের অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে পারছে।

কাজের বিনিময়ে খাদ্য, অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ভাতা বৃদ্ধিরও সুপারিশ করা হয় তার প্রবন্ধে।

অধ্যাপক শাহান বলেন, সুবিধাভোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী নগদ সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জীবিকার কথা বিবেচনা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।