আর কোনো ‘এসআরও নয়’, কঠোর নির্দেশ অর্থমন্ত্রীর

রাজস্ব আদায়ে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য চলতি অর্থবছরে আরও কোনো বিশেষ আদেশ কিংবা প্রজ্ঞাপন জারি না করতে এনবিআরকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2019, 02:11 PM
Updated : 13 Oct 2019, 03:35 PM

তিনি বলেছেন, “এবার কোনো এসআরও ইস্যু করা যাবে না। এসআরও ইস্যু করতে হলে চেয়ারম্যান (এনবিআর) সাহেব সেই ফাইলটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাবেন। উনার অনুমোদন যদি আনতে পারেন, তাহলে ইস্যু করবেন। অন্যথায় কোনো এসআরও ইস্যু করা যাবে না।”

ঢাকার সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডে রোববার কাস্টম কমিশনার ও রাজস্ব বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকেএ নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াও ছিলেন।

শুল্ক আইনে নানা বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কাজটি এনবিআর এসআরও’র মাধ্যমে করে থাকে।

এনবিআরের ঘন ঘন এসআরওর কারণে নানা মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কথা বিচারকরাও বলে আসছিলেন।

কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে বিচারপতিদের কথা শুনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, “আমি এসআরওর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। আমরা একটা আইন করি। এরপর থেকে এসআরও হতেই থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ছোট একটা আইন, এসআরও তার চেয়েও বড়।”

এখনকার অর্থমন্ত্রীও বললেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায় আয়কর, কাস্টমস এবং ভ্যাট যে কোনো বিভাগেই রাজস্ব ছাড় দিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা যাবে না।

শুল্ক আইনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে ছাড় দিতে হয়, তা দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দেওয়া হয় স্বীকার করেই মুস্তফা কামাল বলেন, “অন্যান্য ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার প্রবণতা কমাতে হবে।

“এতটা ছাড় বিশ্বের কোথাও নেই। বিদেশে কি শিপ ইয়ার্ড হয় না? বিদেশে কি পাওয়ার সেক্টর নাই? তাদের পাওয়ার সেক্টর কি আমাদের চাইতে কম বিকশিত? সব জায়গায় বিকশিত। আমরা কোনও একটা উছিলা পাইলেই শুল্ক ছাড় দিতে চাই।”

মাত্রাতিরিক্ত ছাড়ের কারণে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ হয় না বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় পরে সেই লক্ষ্য কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে সেই লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি; আদায় হয় ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

উপস্থিত কাস্টমস কমিশনারদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আপনারা এ বছরের বাজেটটি ভাল করে পড়েন। এর দাঁড়ি-কমা পর্যন্ত আমরা এবার বাস্তবায়ন করব। বাজেটে এমন কিছু কি আছে, যেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব না?

“আমরা যদি টার্গেট পূরণ করতে না পারি বা আপনার স্যালারি যদি আর্ন করতে না পারেন তাহলে কীভাবে হবে? সরকারের সমস্ত ব্যয়ভার এটার ওপরে নির্ভর করে।”

“বিদ্যমান যেসব ছাড় আছে সেগুলোকে আমরা পুনর্গঠন করবো। একদম ছাড় দিলাম না, আবার পূর্ণমাত্রায় চাপিয়েও দিলাম না,” বলেন মন্ত্রী।

মন্ত্রীর উদ্দেশে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “স্যার, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে এনবিআর কর্মকর্তারা রাজস্ব আহরণের টার্গেট পূরণে আগের চেয়ে অনেক বেশি তৎপরতা দেখাচ্ছেন।

“এজন্য আমি শক্ত এবং নরম, দুটো অ্যাকশন নিচ্ছি। নরম হচ্ছে তাদের প্রাপ্য যা আছে আমি দিয়ে দিচ্ছি, যেমন- পদোন্নতিসহ আরও যা যা পাওনা আছে সেগুলো। আর শক্ত হচ্ছে কারও কোনো অবহেলা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনও নিচ্ছি।”