আমদানি কমায় লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত

আমদানি কমায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ; যা অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা- তা নিয়ে সংশ্রয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 03:54 PM
Updated : 10 Oct 2019, 03:54 PM

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের এই দুই মাসে উদ্বৃত্তের বদলে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকে ৭০ লাখ ডলার ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল।

চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-অগাস্ট সময়ে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে (ওভারওল ব্যালান্স) উদ্বৃত্ত হয়েছে ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই লেনদেনে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

জুলাই-অগাস্ট সময়ে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই উদ্বৃত্ত ছিল একটু বেশি; ৫২ কোটি ১০ লাখ ডলার।

সবমিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুটা সরকারের জন্য ‘স্বস্তি’র হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষক জায়েদ বখত।

তবে এক-দুই মাসের তথ্য দিয়ে লেনদেন ভারসাম্যের গতি বোঝা যাবে না জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কৃষি উৎপাদনে গত কয়েক বছরের সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকলে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে রাখা সম্ভব।তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সেটা আর সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে রপ্তানি আয়ে যে ধাক্কা লেগেছে সেটা না কাটলে গত অর্থবছরের মতো এবারও লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়েই শেষ হবে অর্থবছর।

“তবে আশার কথা হচ্ছে রেমিটেন্স প্রবাহ বেশ ভালো। আমেরিকা-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা আছে।সবমিলিয়ে পরিস্থিতি কি হয়- সেটা সরকারকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।”

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

বাণিজ্য ঘাটতি ২ বিলিয়ন ডলার

লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত থাকায় পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতিও কমেছে।জুলাই-অগাস্ট সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

জুলাই-অগাস্টে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) মোট ৮৬২ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। আর পণ্য রপ্তানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) আয় হয়েছে ৬৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এ হিসাবেই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

তথ্যে দেখা যায়, এই দুই মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর রপ্তানি আয় কমেছে ১ দশমিক ০৬ শতাংশ।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৪৯ কোটি কো৪০ লাখ (১৫.৪৯ বিলিয়ন) ডলার।২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল আরও বেশি ১৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।

তবে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও কিছুটা বেড়েছে।জুলাই-অগাস্টে এ খাতের ঘাটতি ছিল ৫১ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

এফডিআই বেড়েছে ৭.১২%

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

গত বছরের জুলাই-অগাস্টে মাসে ৬৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছিল বাংলাদেশে। এই বছরের একই সময়ে এসেছে ৭৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এ হিসাবে এই দুই মাসে এফডিআই বেড়েছে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ।

এই দুই মাসে বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছে ৪২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আগের বছরে একই মাসে এসেছিল ৪০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়ে থাকে।

পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ নেই!

তবে পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) প্রবাহের গতি গতবারের মতোই হতাশাজনক।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে মাত্র ২ কোটি ডলারের নিট এফডিআই এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল আরও কম; ৫০ লাখ ডলার।

জুলাই-অগাস্ট সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ বাংলাদেশে এসেছে ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত বছরের এই দুই মাসে এসেছিল ৬৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।