বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে প্রবৃদ্ধি হবে ৭.২%

চলতি অর্থ বছরে সরকার বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে, অর্জন তার থেকে এক শতাংশ কম হবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 09:51 AM
Updated : 10 Oct 2019, 04:37 PM

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ নিয়ে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। তার আগে বিশ্ব ব্যাংকের বৈশ্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ নিয়ে জুনের প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

সে হিসেবে সরকারের প্রাক্কলনের চেয়ে বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি হার কমলো ১ শতাংশীয় পয়েন্ট এবং এই সংস্থাটির আগের পূর্বাভাসের চেয়ে কমেছে দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট, অক্টোবর-২০১৯’ শীর্ষক হালনাগাদ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ে জোরালো প্রবৃদ্ধি এবং জোরালো অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বড় ধরণের বিনিয়োগের মাধ্যমে সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত হবে।

তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বা বিনিময় মূল্য সমন্বয়, দক্ষ জনশক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আর্থিক খাতের সুশাসন ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতার অভাবে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করে বিশ্ব ব্যাংক।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যে জোর দিয়ে হ্যাভেন বলেন, হালকা প্রকৌশল, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, কৃষি, তথ্য প্রযুক্তি ও ওষুধ শিল্প খাতে বিপুল দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।

“প্রতিবছর রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ায় এসব খাতে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হলেও তা চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে এ চাহিদা পূরণ করতে হবে।

এজন্য কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে প্রয়োজনভিত্তিক জনশক্তি গড়ে তোলার কথা বলেন তিনি।

আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব- বিশেষ করে খেলাপি ঋণে প্রবৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকঋণের সুদের হার দুই অংকে থাকা, দুর্বল রাজস্ব আহরণ ও দুর্বল প্রতিযোগিতাসক্ষমতাকে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এজন্য মন্দ ঋণ কমিয়ে আনাসহ আর্থিক খাতের সংস্কার, রাজস্ব আহরণ সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়করণ, সময় ও ব্যয় কমিয়ে মানসম্পন্ন উপায়ে সরকারি অর্থ ব্যয়ের পরামর্শ দেওয়া দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর  জন্য ব্যবসায় সহজীকরণ, চলমান উদ্যোগ অব্যাহত রাখা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনে আরও দক্ষ ও মানসম্পন্ন উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে নিতে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তির যোগান নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে রপ্তানি বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংস্থাটির সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, রপ্তানিতে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারের ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনা করে প্রতিযোগিতাসক্ষম হার নির্ধারণে গবেষণা করতে হবে।