সোমবার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ আশার কথা শুনিয়েছেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে রেমিটেন্স পাঠিয়ে এবং পাঠাতে সহায়তা করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেন অর্থমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আহরণ করে ভারত। যার পরিমাণ প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা, এরা বছরে ৬৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স অর্জন করে।
“অথচ আমরা বছরে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করি। রেমিট্যান্স বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের আরও নজর দিতে হবে।”
“তবে বর্তমানে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে করে এবার ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করছি।”
‘যারা বিদেশে যাবেন তাদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিয়ে যেতে হবে’ আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “কারণ অদক্ষ বা ইংরেজি না জানার কারনে আমাদের লোকজন একই কাজ করলেও অনেক দেশের তুলনায় কম বেতন পেয়ে থাকে।”
“আর কিছুদিন বিদেশে থেকে আমাদের সহযোগিতা করুন। এরপর আর বিদেশে থাকতে হবে না। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা হতে নিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়ন হলে আর বিদেশে থাকতে হবে না। দেশে এসে তখন আপনারা ব্যাবসা করবেন। আর মানুষকে কাজ দিবেন।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বিদেশগামীদের দক্ষতা উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষতার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর শ্রমিকরা বিদেশে অনেক বেশি বেতনে কাজ করছে। কারিগরি ও ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করে বিদেশ যাওয়া ভালো।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানো ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য অভিবাসন নীতিমালা করার সময় এসেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব সেলিম রেজা বলেন, “যারা সম্মাননা পাচ্ছেন, তারা বিদেশে আরও বেশি কাজের সুযোগ দিতে সহযোগিতা করলে রেমিটেন্স আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৫১ কোটি ০৪ লাখ (৪.৫১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এই অংক গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।
গত বছরের এই তিন মাসে ৩৮৬ কোটি ৮৯ লাখ (৩.৮৬ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল বাংলাদেশে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স।
বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত।
রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণাদনা পাচ্ছেন।
আর এ জন্য নতুন বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এবার রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল ৩৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানো উৎসাহিত করতে এবার ৩৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এবার সাধারণ পেশাজীবী ক্যাটাগরিতে ১০ জন, বিশেষজ্ঞ পেশাজীবী ৮ জন, ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে ১০ জন, রেমিটেন্স আহরণকারী পাঁচ ব্যাংক এবং অনাবাসী বাংলাদেশি মালিকানাধীন তিনটি একচেঞ্জ হাউজকে ক্রেস্ট ও সনদ দেয়া হয়।
ষষ্ঠবারের মতো দেওয়া হল এই পুরস্কার। ২০১৪ সাল থেকে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য সাধারণ পেশাজীবী ক্যাটাগরিতে কুয়েত প্রবাসী জাকির হোসেন, শিকদার বাচ্চু, যুক্তরাজ্যের ডা আফতাব হোসেন, জার্মানির কামরুজ্জামান, যুক্তরাষ্ট্রের সুকেশ রায়, মালয়েশিয়ার আহমেদ রায়হান সামসী, সিঙ্গাপুরের দেওয়ান মাসুদ কামার, কাতার প্রবাসী ইকবাল হোসেন, নাইজেরিয়ার নওশাদ আহমেদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডা ইশা খশনু পুরস্কার পেয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ পেশাজীবী ক্যাটাগরিতে সিঙ্গাপুর প্রবাসী ইমরুল হোসেন ভুইয়া, ওমানের রফিকুল আলম, কানাডার মোস্তফা কামাল, সিঙ্গাপুরের সুভাষ চন্দ্র মজুমদার, কাতারের নির্মল কান্তি ঘোষ, কুয়েতের তৌহিদ আহমেদ, সোমালিয়ার নাসের আহমেদ ও আফগানিস্তানের রেজাউল বারী চৌধুরীকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংকের পুরস্কার পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক এবং জনতা ব্যাংক।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন মানি একচেঞ্জ হাউজ ন্যাশনাল একচেঞ্জ কোম্পানি, এনইসি মানি ট্রান্সফার লিমিটেড ও প্লাসিড এনকে করপোরেশনকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল ও সমাপনী বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমান।
প্রবাসীদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী চিকিৎসক ডা. আফতাব হোসেন ও ইমরুল হোসেন ভুঁইয়া।